লালাখাল
সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি গোয়াইন নদীর পাশে ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। মূলত জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবহমান পানির সাথে মিশে থাকা খনিজ এবং কাদার পরিবর্তে নদীর বালুময় তলদেশের কারণেই এই নদীর রঙ নীল দেখা যায়। তবে নদীর পানি নীল হওয়ার পরেও লালাখাল নামকরণের পেছনের কোনো ইতিহাস পাওয়া যায়নি। মেঘালয় পর্বতশ্রেণির সবচেয়ে পূর্বের অংশ জৈন্তিয়া হিলসের ঠিক নিচে পাহাড়, প্রাকৃতিক বন, চা বাগান ও নদীঘেরা একটি গ্রাম লালাখাল। ধারণা করা হয় এলাকার নামেই এই নদীর নামকরণ করা হয়েছে। এই লালাখাল দিয়েই মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা প্রথম বাংলাদেশে আসেন।
অনেকের মতে এটি কোনো নদী নয়। কারণ জৈন্তিয়া হিলসের ভারতীয় অংশ থেকে মাইন্ডু নদী লালাখালের সীমান্তের কাছেই সারী নদী নামে প্রবেশ করেছে এবং ভাটির দিকে সারীঘাট পেরিয়ে গোয়াইন নদী হিসেবে মিশেছে। আবার অনেকের ধারণা মতে চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে পানি প্রবাহ লালাখাল হয়ে তামাবিলে সারী নদীতে মিলিত হওয়ায় লালাখাল কোনো নদী নয়, কেবল সারী নদীর একটি অংশ মাত্র। তবে স্থানীয় ভাষায় খাল বলতে নদীকেই বুঝায় তারা। লালাখালে রয়েছে স্বচ্ছ নদীর জলরাশী, দুপাশে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য, সুন্দর বন, পাহাড়, বালুচর ও চা বাগান।
কখন যাবেন |
ঋতু বদলের সাথে সাথে বদলাতে থাকে লালাখাল। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভরা বর্ষায় লালাখালের সৌন্দর্য্য দ্বিগুন বেড়ে যায়। এ সময় সবুজের মাঝে সাদা মেঘের খেলা দেখা যায়, আবার অনেকগুলো ঝর্ণার উচ্ছ্বাস দেখা যায়। কিন্তু বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে লালাখালের পানি হারিয়ে ফেলে স্বচ্ছতা। তখন পানি বেশ ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করে। লালাখালের প্রকৃত রূপ দেখা যায় শীতকালে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টুকু পানির রঙ বদলে গিয়ে পুরোপুরি নীল হতে শুরু করে। পানি এতটাই স্বচ্ছ থাকে যে, উপর থেকে নদীর তলদেশ পর্যন্ত সব স্পষ্ট দেখা যায়। আবার শরতে দেখা যায় এর ভিন্ন আরেক রুপ। পালকের মত নরম সাদা কাশফুলের দেখা মেলে এর প্রতিটা বাঁকে। এছাড়াও এ সময় লালাখালের দুপাশে দেখা যায় চা বাগানের সৌন্দর্য্য। |
বিশেষ পরামর্শ |
নোংরা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন। প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু করবেন না। নিজ মালামাল, মোবাইল, ক্যামেরা নিজ দ্বায়িত্বে রাখবেন। যেকোনো প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তা নিবেন। স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। ট্রিপে খরচ কমাতে সাত থেকে আটজনের গ্রুপ করে যাবেন। কারণ নৌকা অথবা ট্রলি ছাড়া লালাখাল জিরো পয়েন্ট সহ অনেক জায়গায় যাওয়া যাবেনা। নৌকায় চরার বিষয়ে অথবা কেনাকাটার বিষয়ে দরদাম করে ভালোভাবে যাচাই বাচাই করে নিবেন। |
বিশেষ সতর্কতা |
সাতার না জানলে পানিতে নামবেন না। লালাখালের কিছু জায়গায় পানির গভীরতা অনেক বেশি। নৌকার ছাদে বেশি মানুষ উঠবেন না। স্থানীয়দের সাথে কোনো ক্রমেই তর্কে জড়াবেন না। নিজেকে সরলভাবে উপস্থাপন করে সুযোগসন্ধানীদের খপ্পরে পরার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। |
দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে লালাখাল এর দূরত্ব |
|
ঢাকা | ২৬৫ কি.মি. (ঢাকা – সিলেট হাইওয়ে হয়ে গেলে) |
রাজশাহী | ৪৮৪ কি.মি. (ঢাকা – সিলেট হাইওয়ে হয়ে গেলে) |
রংপুর | ৫৭২ কি.মি. (ঢাকা – সিলেট হাইওয়ে হয়ে গেলে) |
সিলেট | ৩৫ কি.মি. |
ময়মনসিংহ | ২২২ কি.মি. (সুনামগঞ্জ হাইওয়ে হয়ে গেলে) |
খুলনা | ৪৩০ কি.মি. (ঢাকা – সিলেট হাইওয়ে হয়ে গেলে) |
বরিশাল | ৪০২ কি.মি. (ঢাকা – সিলেট হাইওয়ে হয়ে গেলে) |
চট্টগ্রাম | ৪৩৪ কি.মি. (ঢাকা – সিলেট হাইওয়ে হয়ে গেলে) |
সিলেট ব্যতীত সারাদেশ থেকে সরাসরি লালাখাল যাওয়ার কোনো যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে আগে সিলেট যেতে হবে। |
|
ঢাকা থেকে যাওয়ার উপায় |
|
বাস |
ঢাকার বাস স্টান্ডসমূহ:-
(গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে রাত ১২.৪৫ পর্যন্ত বাস পাওয়া যায়।) |
বাস সমূহ:-
(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল) |
|
ট্রেন |
ট্রেন সমূহ:
(ট্রেনে গেলে উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়াই বেশি সুবিধাজনক। ট্রেনের সময়সূচী পরিবর্তন হয়। তাই আগে একটু খোঁজ নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন।) |
বিমান |
বিমানসমূহ:
|
রাজশাহী থেকে যাওয়ার উপায় |
|
বাস |
বাস স্টান্ডসমূহ:-
বাস সমূহ:-
(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল) |
ট্রেন |
[রাজশাহী থেকে সিলেট সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর ট্রেনে যেতে হবে।] ঢাকা যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে:
[যেহেতু ঢাকা মেইল ট্রেন ধরতে হবে। তাই প্রথমে নাটোর থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেস দিয়ে ঢাকা যাওয়া ভালো] |
বিমান |
বিমানসমূহ:
|
রংপুর থেকে যাওয়ার উপায় |
|
বাস |
বাস স্টান্ডসমূহ:-
বাস সমূহ:-
(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল) |
ট্রেন |
[রংপুর থেকে সিলেট সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর ট্রেনে যেতে হবে।] ঢাকা যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে:
|
বিমান |
[রংপুরে কোনো বিমানবন্দর না থাকায় সৈয়দপুর থেকে আপনাকে সিলেট যেতে হবে।] বিমানসমূহ:
|
চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার উপায় |
|
বাস |
বাস স্টান্ডসমূহ:-
বাস সমূহ:-
(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল) |
ট্রেন |
জনপ্রিয় ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে:
|
বিমান |
বিমানসমূহ:
|
ময়মনসিংহ থেকে যাওয়ার উপায় |
|
বাস |
বাস স্টান্ডসমূহ:-
বাস সমূহ:-
(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল) |
ট্রেন |
[ময়মনসিংহ থেকে সিলেটে সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর ট্রেনে যেতে হবে।] ঢাকা যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে:
|
খুলনা থেকে যাওয়ার উপায় |
|
বাস |
[খুলনা থেকে সিলেটে সরাসরি কোনো বাস নেই। আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর বাসে অথবা ট্রেনে অথবা বিমানে যেতে হবে।] বাস স্টান্ডসমূহ:-
ঢাকা যাওয়ার বাস সমূহ:-
(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল) |
ট্রেন |
[খুলনা থেকে সিলেটে সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর ট্রেনে যেতে হবে।] ঢাকা যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে:
|
বিমান |
[খুলনা থেকে সিলেটে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর বাসে অথবা ট্রেনে অথবা বিমানে যেতে হবে।] ঢাকা যাওয়ার বিমানসমূহ:
|
বরিশাল থেকে যাওয়ার উপায় |
|
বাস |
বাস স্টান্ডসমূহ:-
বাসসমূহ:-
|
সিলেট থেকে লালাখাল সিলেট কদমতলী থেকে জাফলংগামী লোকাল ও গেটলক বিরতীহীন বাস পাওয়া যায়। এছাড়াও শহরের সোবহানীঘাট থেকেও বাস পাওয়া যায়। এসকল বাসে উঠে সিলেট-তামাবিল রোডের সারীঘাটে নামতে হবে। অথবা, বাস ছাড়াও সরাসরি লেগুনা সার্ভিস রয়েছে। বন্দরবাজার শিশু পার্কের সামনে মাইক্রবাস, সিএনজি কন্টাক অথবা রিজার্ভ যেতে পারবেন। সারীঘাটে নেমে নৌকায় অথবা অটোরিক্সায় লালাখাল যাওয়া যায়। নৌকায় যেতে হলে ১ ঘন্টা সময় লাগবে এবং ভাড়াও বেশি পরবে। তবে নৌকায় গেলে যে দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন তা অটোরিক্সায় পারবেন না। নৌকা ছাড়া অটোরিক্সায় লালাখাল জিরো পয়েন্ট যাওয়ার কোনো পথ নেই। তবে নৌকায় না যেতে চাইলে অটোরিক্সা অথবা সরাসরি গাড়ী নিয়ে লালাখাল যেতে হলে সারী ব্রিজ পেরিয়ে একটু সামনের রাস্তায় যেতে হবে। এই রাস্তার মাঝখানে মেলে একটি পুরাতন স্থাপনা। এটি ছিলো জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজকুমারী ইরাবতীর নামে একটি পান্থশালা। এর পাশ দিয়ে হাতের ডানের রাস্তায় ঢুকে সাত কিলোমিটার গেলেই লালাখাল। |
থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা |
|
[সাধারণত লালাখাল ভ্রমণকারী পর্যটকরা রাত্রিযাপনের জন্য সিলেট শহরেই ফিরে যায়। কারন লালাখাল এলাকায় পর্যটনের অধিক চাপের কারণে এখানকার রিসোর্ট/আবাসিক হোটেলে অনেক আগে থেকে বুকিং দিয়েও থাকার ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তায় পরতে হবে। তারপরেও থাকতে চাইলে নর্দান রিসোর্ট রয়েছে। এখানে অতিথিদের সিলেট যাওয়া আসার জন্য রিসোর্টের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা আছে। এছাড়া লালাখালের কাছে খাদিমনগরে নাজিমগড় রিসোর্ট রয়েছে।] |
|
আবাসিক হোটেলসমূহ |
সিলেটের আবাসিক হোটেলসমূহ:
(উক্ত আবাসিক হোটেলসমূহের নাম দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে বুকিং সম্পর্কিত সকল তথ্য পেয়ে যাবেন।) |
রেস্টুরেন্টসমূহ |
জিন্দা বাজারে খাবার হোটেল:
জাফলং রোড, মিরাবাজারে খাবার হোটেল:
অন্যান্য খাবার হোটেলসমূহ:
(শহরের যেকোনো জায়গায় কিংবা আবাসিক হোটেলের আশেপাশে অনেক রেস্টুরেন্ট পাবেন।) |
সিলেট ভ্রমণের সুবিধা হল–
- উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
- পরিবার/দম্পতি বা বন্ধুদের সাথে উপযুক্ত সময় কাটানোর সুবিধা।
- সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশ।
পরামর্শ: প্রথমত, গাড়ি বা নৌকা ভ্রমণ, হোটেল বুকিং, খাবার কিংবা কোন কিছু কেনার পূর্বে দর কষাকষিতে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। এছাড়াও-
- প্রয়োজনে ছাতা বা রেইনকোট নিবেন।
- স্থানীয় গাইডের সাহায্যে পুরো অঞ্চল সুন্দরভাবে ঘুরতে পারবেন।
- পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু এড়িয়ে চলবেন।
দৃষ্টি আকর্ষণ: যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকবেন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করবেন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতা: হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই উল্লিখিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল নাও থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন।
বি.দ্রঃ সকল প্রকার দালাল/প্রতারক থেকে সাবধান। পথে অনেক সাবধানে চলবেন যেন কোনো প্রকার বিপদে না পরেন। যেকোনো সমস্যায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা নিবেন অথবা বাংলাদেশের জাতীয় জরুরী সেবা – ৯৯৯ এ কল করবেন।
যেকোন তথ্য অথবা ভ্রমণ সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন অথবা কমেন্ট করুন-
→ ইমেইল – admin@biratbazar.com
অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ |
২। জাফলং
৩। ভূতের পাথর
|