fbpx
বাংলাদেশের নদ নদীবাংলাদেশের নদ নদী

বাংলাদেশের নদ নদী


নদ এবং নদীর পার্থক্য হল ব্যাকরণগত। যে সকল নদীর নাম নারী বাচক তাদেরকে বলা হয় নদী। সাধারণত বাংলা ভাষায় নারীবাচক শব্দের শেষে আ-কারান্ত, ই-কারান্ত এবং উ-কারন্ত যুক্ত হয়। যেমন- পদ্মা মেঘনা সুরমা প্রভৃতি। যে সকল নদীর নাম পুরুষবাচক, তাদেরকে বলা হয় নদ। যেমন- নীল,  আমাজন, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, কপোতাক্ষ, কুমার, দুধ কুমার, ভৈরব, আড়িয়াল খাঁ প্রভৃতি। ব্রক্ষ্মারপুত্র ব্রহ্মপুত্রকে মেয়ে ভাবার সুযোগ নেই। তেমনি হিমালয়ের দুহিতা গঙ্গা সে তো নারী ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ (Ganges Delta)বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ নিয়ে গঠিত। এই ব-দ্বীপের বাংলাদেশে অংশের আয়তন ৪৬ হাজার ৬২০ বর্গ কিলোমিটার যা সমগ্র বাংলাদেশের মোট এলাকার মোটামুটি এক-তৃতীয়াংশের সামান্য কিছু কম (প্রায় ৩২%)। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপকে বঙ্গীয় ব-দ্বীপ, সুন্দরবন ব-দ্বীপ বলা হয়। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র সম্মিলিত স্রোতধারা মেঘনার সহযোগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ব-দ্বীপ (Delta) সৃষ্টি করছে। ব-দ্বীপ কে দেখতে গ্রীক বর্ণ ডেল্টা বা মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’ এর মতো। ব-দ্বীপটি পশ্চিমে হুগলি নদী হতে পূর্বে মেঘনা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।

নদ-নদীর সংজ্ঞা: ‘নদ বা নদী’ বলতে পাহাড়, পর্বত, হিমবাহ, হ্রদ, ঝরনা, ছড়া বা অন্য কোনো জলাশয় বা জলধারা হতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়ে যে জলধারা সারাবছর বা বছরের কোনো কোনো সময় দুই তীরের মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র, মহাসমুদ্র, হ্রদ, অন্য কোনো জলাশয় বা জলধারায় পতিত হয় তাকে বোঝায়। তবে শর্ত থাকে যে উপর্যুক্ত সংজ্ঞায় যাই থাকুক না কেন ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে, রিভিশনাল সার্ভে ও বাংলাদেশ রিভিশনাল সার্ভে রেকর্ডে নদ বা নদী হিসেবে যা উল্লেখ হয়েছে তা নদ বা নদী হিসেবে গণ্য হবে।

নদ-নদীর সংখ্যা: নদ-নদীর সংখ্যা নির্ধারণে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রথম উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০০৫ সালে ‘পানিবিজ্ঞান’ গ্রন্থে শনাক্তকরণ নম্বরসহ যে তালিকা প্রকাশ হয়, সেখানে নদ-নদীর সংখ্যা ছিল ৩১০ টি। ২০১১ সালে পরবর্তী সংস্করণে ৪০৫ টি নদ-নদীর কথা বলা হয়। অন্যদিকে স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা সংস্থা CEGIS’র তথ্যানুসারে, দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৪৪৫। পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক রচিত ‘বাংলাদেশের নদনদী’ গ্রন্থে বলা হয়, দেশে নদীর সংখ্যা ১১৮২। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের গ্রন্থে ১০০৮ টি নদীর তথ্য রয়েছে।

বিভিন্ন নদীরসমূহের দৈর্ঘ্য-

নদীর নাম দৈর্ঘ্য
পদ্মা ৩৪১ কিলোমিটার
ইছামতি ৩৩৪ কিলোমিটার
সাঙ্গু ২৯৪ কিলোমিটার
ভৈরব ২৪২ কিলোমিটার
মেঘনা ২২১ কিলোমিটার
মাতামুহুরী ১৭৬ কিলোমিটার
কর্ণফুলী ১৬১ কিলোমিটার
যমুনা ১৬০ কিলোমিটার
তিস্তা ১১৩ কিলোমিটার
হালদা ১০৬ কিলোমিটার
পশুর ১০৪ কিলোমিটার
ব্রহ্মপুত্র ৮৫ কিলোমিটার
নাফ ৬৩ কিলোমিটার
গাঙ্গিনা ০.০৩২ কিলোমিটার

দীর্ঘতম নদী পদ্মা এবং ক্ষুদ্রতম নদী গাঙ্গিনা। গাঙ্গিনা নদীর দৈর্ঘ্য ০.০৩২ কি.মি.। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়াও কলমদানী নদী (০.০৪২ কি.মি. – প্রবাহিত হয় ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহতে) এবং ইটবাড়িয়া নদী (০.১০০ কি.মি. – প্রবাহিত পটুয়াখালী সদরে) ক্ষুদ্রতম নদী কিন্তু গাঙ্গিনার থেকে বড় নদী।

  • সবচেয়ে বেশি (১২ টি) জেলা নিয়ে প্রবাহিত নদী – পদ্মা
  • সবচেয়ে বেশি (৩৬ টি) উপজেলা নিয়ে প্রবাহিত নদী – মেঘনা
  • সবচেয়ে বেশি (২২২ টি) বিভাগ নিয়ে প্রবাহিত নদী – ঢাকা
  • সবচেয়ে বেশি (৯৭ টি) নদী প্রবাহিত জেলা সুনামগঞ্জ
    [সূত্র :জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশন]

বিভিন্ন নদীর পূর্বনাম –

  • পদ্মা এর পূর্বনাম কৃর্তিনাসা
  • যমুনা এর পূর্বনাম জনাই
  • ব্রহ্মপুত্র এর পূর্বনাম লোহিত্য
  • বুড়িগঙ্গা এর পূর্বনাম দোলাই

দীর্ঘতম কিছু নদী

দীর্ঘতম কিছু নদী

নাম দৈর্ঘ্য (কি.মি.)

যেসব জেলায় প্রবাহিত

পদ্মা

৩৪১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর

ইছামতি

৩৩৪

চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরা

সাঙ্গু/শঙ্খ

২৯৪

বান্দরবান ও চট্টগ্রাম

ধলেশ্বরী

২৯২

টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ

কুশিয়ারা

২৮৮

সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ

যমুনা

২৫৪

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ

ব্রহ্মপুত্র

২৪৯

সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর

সুরমা

২৪৯

সুনামগঞ্জ ও সিলেট

আত্রাই

২৪৮

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর

সুরমা

২৪২

সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ

ভৈরব

২৪২

চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও খুলনা

তিস্তা

২৪০

পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম

বংশাই

২৩৯

জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা

কপোতাক্ষ

২৩৮

ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা

ডাহুক

২৩৭

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার

কর্ণফুলী

২৩৭

চট্টগ্রাম

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র

২৩০

গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী

পুনর্ভবা

২২৩

নওগাঁ, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও

মেঘনা

২২১

কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর ও ভোলা

বাঙ্গালী

২১৭

গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ

নবগঙ্গা

২১৪

চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা ও যশোর

 


বাংলাদেশের কিছু নদী সম্পর্কে কিছু কথা:-

পদ্মা: বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার গঙ্গা নদীর মূল প্রবাহ রাজশাহী অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রান্তে পদ্মা নামে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার প্রর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সীমানা বরাবর এসে কুষ্টিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে বাংলাদেশের প্রবেশ করেছে এরপর দৌলতদিয়ার নিকট যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। গঙ্গার মূলধারা হওয়াতে দৌলদিয়া পর্যন্ত এই নদীটি গঙ্গা নদী নামে পরিচিত। বাংলাদেশে প্রবেশের পর দেশের (১২) জেলার উপর যে প্রবাহিত হওয়ার সময় এটি স্থানীয়ভাবে অনেকে পর্দা নামে চেনেন।গঙ্গা ও যমুনার মিলিত ধারা পর্দা নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই তিন নদীর মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে ।

ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা: ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের নদী গুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ বহু নদীখাত সম্মিলিত একটি নদ। এর ধরনেও রয়েছে বিভিন্নতা যেমন- বিনুনী, সর্পিল। ব্রহ্মপুত্র নদ কুড়িগ্রাম জেলার ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করে। এরপর জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের কাছে দক্ষিণ-পূর্বে বাঁক নিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে জামালপুরও ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারের নিকট মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। ১৭৮৭ সালের ডাউকি চ্যুতি বরাবর তীব্র ভূমিকম্পের পর ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার নতুন স্রোতধারা শাখা নদী তৈরি হয়।নতুন স্রোতধারাটি দক্ষিণ দিকে যমুনা নামে প্রবাহিত হয়। এটি দক্ষিণে গোয়ালন্দ পর্যন্ত যমুনা নামে পরিচিত।

মেঘনা: মেঘনা বাংলাদেশের বৃহত্তম, প্রশস্ততম এবং গভীরতম নদী। আসামের বরাক নদী নাগা- মনিপুর অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে সুরমা এবং কুশরিয়া নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের কাছে উওর সিলেটের সুরমা এবং দক্ষিণে সিলেটের সুরমা এবং কালনী নদী এক সংঙ্গে মিলিত হয়েছে।পরে মিলিত প্রবাহ কালনী নামে দক্ষিনে কিছুদূর প্রকৃত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে। মেঘনা কিশোরগঞ্জের ভৈরবাজের নিকট পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়ে দক্ষিণ পশ্চিমে মিলিত হয়েছে এবং চাঁদপুরের কাছে পদ্মার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

কর্ণফুলী: বাংলাদেশর সবচেয়ে খরস্রোতা নদী কর্ণফুলী। কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি ভারতের মিজোরাম প্রদেশের মমিত জেলার শৈতা গ্রাম (লুসাই পাহাড়) হতে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর মোহনাতে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর অবস্থিত। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে, আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক পূর্ণিমা রাতে তাঁরা দুই জন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিলেন। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটা উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান, তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন, কিন্তু সফল হন নি। রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এই করুণ কাহিনী থেকে নদীটির নাম হয় ‘কর্ণফুলী’। মার্মা আদিবাসীদের কাছে নদীটির নাম কান্সা খিওং। কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বাংলাদেশের প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর জন্য জল সরবরাহ করে। এছাড়াও, নদীটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নদীটি দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে। কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নদীর দুই পাশে সবুজ পাহাড়, বনভূমি এবং সমতল ভূমি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি করেছে। নদীতে নৌকা ভ্রমণ একটি জনপ্রিয় বিনোদন।

হালদা নদী: বাংলাদেশ তথা এশিয়ার সর্ববৃহৎ ‘প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা। এই নদী থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছের রেণু পোনা সংগ্রহ করা হয়। ২০২০ সালে এই নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। হালদা ভ্যালি খাগড়াছড়িতে অবস্থিত। মূলত এটি বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার রুদ্রপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায়। নদীটি রামগড় উপজেলা, মাটিরাঙ্গা উপজেলা, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলা ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রাম জেলার কালুরঘাটের নিকটে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। হালদা নদী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য প্রজননক্ষেত্র। এ নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, শিং, বোয়াল, ভেটকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এ নদীতে প্রতিবছর বর্ষাকালে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে। হালদা নদী বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নদীর দুই পাশে সবুজ পাহাড়, বনভূমি এবং সমতল ভূমি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি করেছে। নদীতে নৌকা ভ্রমণ একটি জনপ্রিয় বিনোদন। হালদা নদীর সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নদীর তীরে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এছাড়াও, নদীর তীরে অনেক সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে। হালদা নদী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। নদীটি দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হালদা নদীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

হালদা নদীর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল:

  • হালদা নদী পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখানে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে।
  • হালদা নদীর পানিতে প্রচুর ম্যাক্রো ও মাইক্রো পুষ্টি উপাদান থাকার ফলে নদীতে পর্যাপ্ত খাদ্যাণুর সৃষ্টি হয়।
  • হালদা নদীর বাঁকগুলোকে “অক্সবো” বাঁক বলে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পানির প্রচণ্ড ঘূর্ণন যার ফলে গভীর স্থানের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় ভাবে গভীর স্থানগুলোকে “কুম” বা “কুয়া” বলা হয়। উজান হতে আসা বিভিন্ন পুষ্টি ও অন্যান্য পদার্থ কুমের মধ্যে এসে জমা হয়। ফলে পানি অতি ঘোলা হয়। মা মাছেরা কুমের মধ্যে আশ্রয় নেয় এবং ডিম ছাড়ে।

হালদা নদীর বর্তমান অবস্থা:

  • হালদা নদী বর্তমানে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে, দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভূমিক্ষয় হচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে হালদা নদীর মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে।
  • হালদা নদীর সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ড্রেজিং করা হচ্ছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ভূমিক্ষয় রোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
  • হালদা নদীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নদীটি সংরক্ষণ ও উন্নত করার জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

নাফ: নাফ নদী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলাকে পৃথক করেছে। বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা এবং মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর নাফ নদীর তীরে অবস্থিত।

গোমতী: গোমতী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার একটি নদী। আকস্মিক বন্যা এ নদীর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং এ বন্যা মোটামুটি নিয়মিত বিরতিতে সংঘটিত হয়ে থাকে। এজন্য এ নদী একসময় ‘কুমিল্লা শহরের দুঃখ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। দাউদকান্দি পর্যন্ত গোমতী জোয়ার-ভাটা প্রভাবাধীন, কিন্তু উজান অঞ্চলে জোয়ার-ভাটার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না।

ভৈরব: ভৈরব নদী কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর ও খুলনা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। খুলনা ও যশোর শহর এই নদীর তীরে অবস্থিত। খুলনার খালিশপুরে ভৈরব নদীর তীরে নির্মিত হয়েছে গোয়ালপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

কয়েকটি নদীর উৎপত্তিস্থল

নদীর নাম

উৎপত্তিস্থল

পদ্মা

হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে

মেঘনা

আসামের নাগা মণিপুর পাহাড়ের দক্ষিণে লুসাই পাহাড়

ব্রহ্মপুত্র

তিব্বতের হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর হ্রদ থেকে

কর্ণফুলী

মিজোরাম লুসাই পাহাড়ের লংলেহ

করতোয়া, তিস্তা

সিকিমের পার্বত্য অঞ্চল

মহুরী

ত্রিপুরার লুসাই পাহাড়

ফেনী

পার্বত্য ত্রিপুরার পাহাড়

গোমতি

ত্রিপুরা পাহাড়ের ডুমুর

খোয়াই

ত্রিপুরার আঠারমুড়া পাহাড়

সালদা

ত্রিপুরার পাহাড়

লাফ, সাঙ্গু

আরাকান পাহাড়

মনু

ত্রিপুরার পাহাড়

মহানন্দা

হিমালয় পর্বতমালার মহালদিরাম পাহাড়

কংস

ভারতের শিলং মালভূমির গারো পাহাড়

মাতামুহুরী

বান্দরবানের লামার মইভার পর্বত

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি ও সমাপ্তি

হালদা

খাগড়াছড়ির বাদনাতলী পর্বতশৃঙ্গ

  • হালদা কর্ণফুলী নদীতে এবং মাতামুহুরী বঙ্গপোসাগরে পতিত হয়েছে।

প্রধান নদীসমূহের মিলনস্থল

নদীর নাম

মিলনস্থল

মিলিত হওয়ার পর নদীর নাম

পদ্মা ও যমুনা

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী), দৌলতদিয়া

পদ্মা

পদ্মা ও মেঘনা

চাঁদপুর

মেঘলা

কুশিয়ারা ও সুরমা

আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ

কালনি থেকে মেঘনা

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা

ভৈরব বাজার

মেঘনা

বাঙ্গালী ও যমুনা

বগুড়া

যমুনা

হালদা ও কর্ণফুলী

কালুরঘাট, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলী

তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র (যমুনা)

চিলমারী, কুড়িগ্রাম

ব্রহ্মপুত্র

 

 

 

 

প্রধান নদীসমূহের মিলনস্থল

 

উপনদী ও শাখা নদী

নদীর নাম

উপনদী (Tributary River)

শাখানদী (Distributary River)

পদ্মা

মহানন্দা, পুনর্ভবা

কুমার, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, গড়াই, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ

মহানন্দা

পুনর্ভবা, নাগর, ট্যাংগন, পাগলা কুলিখ

 

মেঘনা

মনু, বাউলাই, তিতাস, গোমতী

 

ব্রহ্মপুত্র

ধরলা ও তিস্তা

যমুনা, বংশী, শীতলক্ষ্যা

যমুনা

তিস্তা, করতোয়া ও আত্রাই

ধলেশ্বরী

কর্ণফুলী

হালদা, বোয়ালখালি, কাসালং, মাইনী

 

ধলেশ্বরী

 

বুড়িগঙ্গা

ভৈরব

 

কপোতাক্ষ, শিবসা ও পশুর

উপনদী ও শাখা নদী

নদী তীরবর্তী জেলা শহর

স্থানের নাম

নদীর নাম

পঞ্চগড়, বগুড়া

করতোয়া

নীলফামারী, লালমনিরহাট

তিস্তা

কুড়িগ্রাম

ধরলা

ঠাকুরগাঁও

টাঙ্গন

দিনাজপুর

পুনর্ভবা

রংপুর, গাইবান্ধা

ঘাঘট

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

মহানন্দা

রাজশাহী

পদ্মা

শরীয়তপুর

কীর্তিনাশা

পাবনা

ইছামতি

সিরাজগঞ্জ

যমুনা

কুষ্টিয়া

গড়াই

যশোর

ভৈরব

গোপালগঞ্জ

মধুমতি

খুলনা

ভৈরব, রূপসা

সিলেট, সুনামগঞ্জ

সুরমা

মৌলভীবাজার

মনু

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া

তিতাস

ঢাকা

বুড়িগঙ্গা

নারায়ণগঞ্জ

শীতলক্ষ্যা

গাজীপুর

তুরাগ

মাদারীপুর

আড়িয়াল খাঁ

ঝালকাঠি

বিষখালী

পিরোজপুর

বলেশ্বর

বরিশাল

কীর্তনখোলা

চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি

কর্ণফুলী

বান্দরবান

শংখ বা সাঙ্গু

খাগড়াছড়ি

চেঙ্গী

 

Leave a Reply