fbpx
মাটি পরীক্ষা

সয়েল টেষ্ট কি?

সয়েল টেস্ট (Soil Test) এর বাংলা অর্থ হল মাটি পরীক্ষা। কোন জমির পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে জানা অথবা কোন স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য উক্ত স্থানের মাটির ভর ধারণক্ষমতা, মজবুত ভিত্তি ও সর্বাধিক নিরাপত্তার নিশ্চয়নের বেপারে পূর্ব পরিকল্পনা তৈরির জন্য মাটির যে পরীক্ষামূলক কাজ করা হয় তাকে সয়েল টেষ্ট (Soil Test) বলে। ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায়, স্থাপনা বা বিল্ডিং এর ভূ-নিম্নস্থ মাটির পরীক্ষা করাকে সয়েল টেষ্ট বলে।

সয়েল টেষ্ট কেন করবেন?

বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা যেমনঃ আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন, হাসপাতাল, মসজিদ-মন্দির, শপিং কমপ্লেক্স বা মার্কেট, বিভিন্ন ধরনের ব্রীজ-কাল্ভার্ট, মহাসড়ক বা রেললাইন, এয়ারপোর্ট, কারখানা ইত্যাদি ভবন নির্মাণ করার পূর্বে সয়েল টেষ্ট আবশ্যকীয়। সয়েল টেষ্ট না করলে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কোন নীচু জায়গা ভরাট করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করতে চাইলেও সয়েল টেষ্ট বা মাটির পরীক্ষা করা জরুরী। অর্থাৎ স্থাপনা নির্মাণে ভূ-গর্বস্থ মাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জনের জন্য সয়েল টেষ্ট বা মাটির পরীক্ষা করতে হয়।

শুধু তাই নয়, যে কোন কৃষি কাজের ক্ষেত্রে মাটির গুণগত মান নির্ধারণ, মাটির উর্বরতা শক্তির মান, ফসল উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির উপস্থিতি নির্ণয়, মাটির পিএইচ এর মান নির্ণয় ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মাটির পরীক্ষা করানো হয়।


মাটি পরীক্ষার নিয়ম বা পদ্ধতি

দালানকোঠা নির্মাণ বা কৃষি কাজের জন্য মাটির গুণগত মান নির্ধারণে মাটি পরীক্ষা করতে হয়। মাটি পরীক্ষার জন্য কিছু ধাপ অনুস্মরণ করতে হবে।

১. নমুনা সংগ্রহ করা:

  • নির্ধারিত জমির বিভিন্ন স্থান থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
  • যতগুলো স্তর নেয়া হবে ততগুলো স্তর থেকে অন্তত ৫০০ গ্রাম পরিমান মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
  • নমুনা সংগ্রহের জন্য সঠিক মাপের নমুনা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।
  • সংগৃহীত নমুনাগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

২. পরীক্ষা-নিরীক্ষা:

  • পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত নমুনাগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পরীক্ষাগারে মাটির পুষ্টিগত উপাদান, পিএইচ এর মাত্রা, জৈব পদার্থের স্তর, ভর ধারণ ক্ষমতা সহ আরো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পরীক্ষা ল্যাবের পরীক্ষকদের দ্বারা করাতে হবে।

৩. ফলাফল বিশ্লেষণ:

  • মাটি পরীক্ষার পর এর ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করা যাবে।
  • মাটির ব্যবহার উপযোগীতা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাবে।
  • মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে জানা যাবে।
  • পরীক্ষাকৃত মাটির উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

মাটি বিশ্লেষণ

দালানকোঠা বা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষার জন্য যে সমস্ত বিষয় বিবেচনা করতে হয় তা হলোঃ

  • যেহেতু মাটির বিয়ারিং ক্যাপাসিটি ভবনের নকশা তৈরির আগেই বুঝে নিতে হয় তাই মাটি পরীক্ষাকরণের মাধ্যমে এর ক্ষমতা সম্পর্কে সূক্ষ্ম ধারণা পাওয়া।
  • জমির মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে ভবনে কিরকম ফাউন্ডেশন দেয়া যাবে তা জানা যায় মাটি পরীক্ষার ফলাফল থেকেই।
  • মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে ভবনের নিচের মাটি সরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানা যায়। কেননা ভবন তৈরি হবার পর মাটি সরে গেলে সেই ভবনের উপর চাপ পরে ফাটল সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে।
  • প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে মাটি সরে যাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে।

Soil testing বা মাটি পরীক্ষার ধরণ গুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • সয়েল ক্লাসিফিকেশন
  • পার্টিকেল সাইজ ডিস্ট্রিবিউশন
  • ময়েশ্চার কন্টেন্ট ডিটার্মিনেশন
  • স্পেসিফিক গ্রাভিটি
  • লিকুইড লিমিট টেস্ট
  • প্লাস্টিক লিমিট টেস্ট
  • পার্টিকেল সাইজ অর স্পেসিফিক গ্রাভিটি টেস্ট
  • ওয়াশ বোরিং টেস্ট

বাংলাদেশের ভবন নির্মাণে মাটি পরীক্ষার জন্য যে পদ্ধতিটি সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হলো “ওয়াশ বোরিং” টেস্ট।

ওয়াশ বোরিং এ মাটি পরীক্ষার জন্য যে সমস্ত কাজ করানো হয় তা হলো:

  • একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পানির সাহায্যে দুই ইঞ্চি ব্যাচের একটি নল কে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে মাটির ভিতরে প্রবেশ করানো হয়।
  • এরপর প্রতি পাঁচ ফুট বা দেড় মিটার পর পর এর ঘাত সংখ্যা ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
  • প্রতি পাঁচ ফুট পর পরবর্তী দেড় ফুট পাইপ মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে যে পরিমাণ আঘাত করা হয় তা বিবেচনা না করলেও এর পরবর্তী ১২ ইঞ্চি পাইপ প্রবেশ করাতে যে পরিমান আঘাত করা হয় সেই সংখ্যাকে N এর মান হিসেবে ধরা হয়। এখানে N হলো প্রতি বর্গমিটারে মাটির ভর বহন ক্ষমতা।

এই N এর মানকে নিম্নোক্ত ভাবে প্রকাশ করানো যায়:

N এর মান মাটি সম্পর্কে মন্তব্য মাটির ভার বহন ক্ষমতা
২ বা কম খুবই নরম ২-৫ টন/ প্রতি বর্গমিটারে
৫-৯ মাঝারি ৫-১০ টন/ প্রতি বর্গমিটারে
৯-১৭ শক্ত মাটি ১০-২০ টন/ প্রতি বর্গমিটারে
১৭-৩৩ খুবই শক্ত মাটি ২০-৪০ টন/ প্রতি বর্গমিটারে
৩৩ বা তার উপরে কঠিন মাটি ৪০ টন/ প্রতি বর্গমিটারে বা বেশি

 

একজন জমির মালিক হিসেবে মাটি পরীক্ষার সময় জমির মাপ অনুসারে যেন সঠিক ভাবে বোরিং হোল করার মাধ্যমে এর মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেই দিক টি খেয়াল রাখা উচিত।

জমির মাপ অনুসারে বোরিং হোলের সংখ্যা:

জমির মাপ বোরিং হোলের সংখ্যা
৩ কাঠা পর্যন্ত ৩ টি
৩-৫ কাঠা পর্যন্ত ৫ টি
৫-১০ কাঠার মধ্যে ৮ টি
১০ কাঠার উপরে ১২ টি

 

মাটি পরীক্ষার সময় জমির মালিক কে কিছু দিক লক্ষ অবশ্যই রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। যেমন:

  • পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হ্যামারের ওজন ৬৩.৫ কেজি আছে কিনা এবং এটি প্রায় ৩০ ইঞ্চি উচ্চতা থেকে ড্রপিং করা হচ্ছে কিনা।
  • প্রতি ৫ ফুট পর পর আলাদা আলাদা ভাবে আলাদা প্যাকেটে মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে কিনা।
  • পরীক্ষায় কাউন্ট হওয়া N এর Value বা মান সঠিকভাবে নির্ণয় ও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে কিনা।
  • মাটির অবস্থা যেমনই হোক তা ৬০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত স্যাম্পল সংরক্ষণ করা হচ্ছে কিনা।

মাটি বিশ্লেষণ


ভবন নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষার পাশাপাশি কখনো কখনো কৃষি জমির জন্যেও মাটি পরীক্ষা করা হয়।

কৃষি জমির মাটি পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও কৃষি জমির মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা মাটির পুষ্টিগত গুণাগুণ, পিএইচ এর মাত্রা এবং জৈব পদার্থের স্তর সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।

যেসব কারণে কৃষি জমির মাটি পরীক্ষা করা উচিত:

  • জমির উর্বরতা নির্ধারণ: মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাটিতে কতটুকু নাইট্রজেন, ফসফরাস, পটাশ, ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি কেমন রয়েছে তা জানা যায়, যা জমির উর্বরতা নির্ধারণ এবং প্রয়োজনে সার প্রয়োগ করতে সাহায্য করে।
  • ফসলের জন্য উপযুক্ত মাটি নির্ধারণ: জমিতে বিভিন্ন ফসলের জন্য বিভিন্ন ধরনের মাটির প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে কোন ফসলের জন্য কোন ধরনের মাটি উপযুক্ত সে সম্পর্কে জানা যায়।
  • মাটির পিএইচ মান নির্ধারণ: মাটির পিএইচ মান মাটির অম্লতা বা ক্ষারীয়তা নির্দেশ করে। প্রায় সব ধরনের ফসলের জন্য পিএইচ মান ৬.০ থেকে ৭.০ হলো উপযুক্ত। ব্যবহারযোগ্য মাটিতে এই মান আছে কিনা তা মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
  • জৈব পদার্থের স্তর নির্ধারণ: জৈব পদার্থ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং মাটির গঠন উন্নত করে। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে জমিতে কি পরিমাণ জৈব উপাদান রয়েছে এবং কি পরিমাণ জৈব সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায়।
  • পরিবেশের ক্ষতি রোধ: অতিরিক্ত সারের ব্যবহার পরিবেশ এর জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে জমির জন্য প্রয়োজনীয় সার এবং কি পরিমাণ প্রয়োগ বা ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে জানা যায়।

 

কৃষি জমির মাটি পরীক্ষার জন্য যে সমস্ত কাজ করতে হয় তা হলো:

১। নমুনা সংগ্রহ:

  • সঠিক সময় নির্বাচন: বর্ষাকাল ছাড়া যেকোন সময় মাটির নমুনা সংগ্রহ করা যায়। তবে ফসল কাটার পর নমুনা সংগ্রহ করা সব থেকে ভাল।
  • নমুনা সংগ্রহের সরঞ্জাম: পরিষ্কার কোদাল, ফলা, বালতি, লেবেল, কলম ইত্যাদি।

২। নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি:

  • জমির বিভিন্ন স্থান থেকে (প্রতি একর জমিতে ৮-১০ টি স্থান) নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
  • প্রতিটি স্তর থেকে (০-১৫ সেমি, ১৫-৩০ সেমি, ৩০-৬০ সেমি) নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
  • প্রতিটি স্তর থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম মাটি সংগ্রহ করতে হবে।
  • নমুনা সংগ্রহের পরে লেবেলে জমির নাম, অবস্থান, তারিখ এবং স্তরের তথ্য লিখতে হবে।

৩। নমুনা সংরক্ষণ:

  • নমুনাগুলোকে আলাদা আলাদা ব্যাগ বা পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • নমুনাগুলোকে শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।

৪। পরীক্ষা-নিরীক্ষা:

  • পরীক্ষাগার নির্বাচন: সরকারি বা বেসরকারি অনুমোদিত পরীক্ষাগারে মাটি পরীক্ষা করা যেতে পারে।
  • নমুনা জমা: পরীক্ষাগারে নমুনা জমা দেওয়ার সময় লেবেলের তথ্য সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • পরীক্ষার ধরণ: মাটির পুষ্টি উপাদান (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ, সালফার, জিঙ্ক, বোরন ইত্যাদি), পিএইচ এবং জৈব পদার্থের স্তর পরীক্ষা করা হয়।

৫। ফলাফল বিশ্লেষণ:

  • পরীক্ষার ফলাফল বোঝা: পরীক্ষার ফলাফলে মাটিতে কতটুকু পুষ্টি উপাদান, পিএইচ এবং জৈব পদার্থ রয়েছে তা উল্লেখ থাকে।
  • সার সুপারিশ: পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জমির জন্য প্রয়োজনীয় সার ও সারের পরিমাণ সুপারিশ করবেন।

৬। সুপারিশ অনুযায়ী সার প্রয়োগ:

  • সঠিক সার নির্বাচন: কৃষি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী সঠিক সার নির্বাচন করতে হবে।
  • সঠিক সার প্রয়োগের সময়: সার সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে।
  • সঠিক সার প্রয়োগের পদ্ধতি: সার সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।

Leave a Reply


Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the schema-and-structured-data-for-wp domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/birajcrj/public_html/blog/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the rank-math domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/birajcrj/public_html/blog/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the rank-math-pro domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/birajcrj/public_html/blog/wp-includes/functions.php on line 6114