fbpx
আমিয়াখুম জলপ্রপাত

আমিয়াখুম জলপ্রপাত


বাংলাদেশের ‘নায়াগ্রা ফলস’ খ্যাত আমিয়াখুম জলপ্রপাত। যা বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা নাক্ষিয়ং নামক স্থানে অবস্থিত। বিভিন্ন অঞ্চলে এটিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। তার মধ্যে খুমের-রাজ্য, নাফাখুম, আমিয়াখুম, ভেলাখুম ও সাতভাইখুম প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। এটি মুলত পাহাড়ি দুর্গম এলাকার একটি শীতল পানির জলপ্রপাত। স্থানীয়দের নিকট এটি “আমিয়া খুম” বলেই পরিচিত। কেননা বর্মি বা মারমা ভাষায় খুম অর্থ জলপ্রপাত। কিন্তু বাংলা ভাষার সুবিধার্থে একে আমিয়াখুম জলপ্রপাত নামে বলা হয়। এছাড়াও যেসকল জলপ্রপাত কখনও শুকিয়ে যায়না সেসকল জলপ্রপাতকে “খুম” বলা হয়। তাই ঝর্ণার পানি শুকিয়ে গেলেও খুম কখনও শুকিয়ে যায়না।

পাহাড়ী সাঙ্গু নদী বয়ে চলার পথে অসংখ্য জলপ্রপাতের মধ্যে এই জলপ্রপাত সবথেকে সুন্দর জলপ্রপাত হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনকি বাংলাদেশের যেসকল সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। তাই এই জলপ্রপাত সকলের নিকট “বাংলার ভূস্বর্গ” নামে পরিচিত। পাথর আর সবুজ-শ্যামল পরিবেশে ঘেরা পাহাড়ের মধ্য থেকে প্রবল বেগে নেমে আসে এই জলধারা। এর গতি এতটাই প্রবল যে, এই জলধারার ফলে দুধ সাদা রঙের ফেনা সৃষ্টি হয়।

তবে জেনে রাখা ভালো, বছরের যেকোনো সময়েই ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত হলেও ভরা বর্ষা মৌসুমে সাঙ্গু নদীর পানি বেশি হওয়ায় ফ্লাশ ফ্লাডের বা হড়কাবানের আশঙ্কা থাকে। তবে ট্রাকিং এর জন্য শীতকালে ভ্রমণ সবচেয়ে সুবিধাজনক।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
আমিয়ামুখ ভ্রমণে যাওয়ার পথে চিম্বুক, নীলগিরি, থানচি, সাঙ্গু নদী, পদ্মমুখ, তিন্দু, রাজাপাথর, রেমাক্রি জলধারা, জিন্নাহপাড়া, তুইছাপাড়া, দেবতা পাহাড় ইত্যাদি অঞ্চলসমূহের দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতি দেখার মত পাবেন। এছাড়াও আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিম পাহাড়, আলীকদম, বগালেক, কেওক্রাডং, লীলাচল, স্বর্ণমন্দির ও চিম্বুক পাহাড়।
বিশেষ পরামর্শ
অনুমতি ছাড়া স্থানীয়দের ছবি তোলা যাবে না। স্থানীয়দের সাথে তর্কে জড়ানো থেকে বিরত থাকবেন। যেখানে সেখানে খোসা বা প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস এবং বোতল ফেলা ঠিক নয়। যেহেতু আপনাকে প্রায় ১০-১২ ঘন্টার দুর্গম এলাকার ট্র্যাকিং এর জন্য যেতে হবে তাই যথাসম্ভব ছোট ব্যাগ এবং হালকা জিনিসপত্র নেয়ার চেষ্টা করবেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, হালকা খাবার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী রাখবেন। এখানে মোবাইল সিম নেটওয়ার্ক হিসেবে রবি ও এয়ার্টেল উপযোগী।

  • ট্রেকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিতে ভুলবেন না।
  • কমপক্ষে ৬ জনের দল গঠন করে ভ্রমন করুন।

ঢাকা থেকে যাওয়ার উপায়

(আমিয়াখুম জলপ্রপাত যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে বান্দরবনে যেতে হবে।) 

বাস

ঢাকার বাসস্টান্ড সমূহ:-

  • ফকিরাপুল
  • সায়েদাবাদ
  • কলাবাগান
  • আব্দুল্লাহপুর
  • গাবতলী
  • কল্যাণপুর
  • যাত্রাবাড়ি

(রাত ০৯.০০ টা থেকে রাত ১১.৩০ পর্যন্ত বাস পাবেন) 

বাসসমূহ:-

  • শ্যামলী
  • হানিফ
  • এস আলম
  • ডলফিন
  • ইউনিক
  • সৌদিয়া 
  • ঈগল
  • সেন্টমার্টিন
  • দেশ ট্রাভেল

ট্রেন

ট্রেন সমূহ:-
  • মহানগর প্রভাতী (৭০৪)
ছাড়ায় সময় ০৭:৪৫
পৌছানোর সময় ১৪:০০ (প্রতিদিন)
  • মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২)
ছাড়ায় সময় ২১:২০
পৌছানোর সময় ০৪:৫০ (রবিবার বন্ধ)
  • তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২)
ছাড়ায় সময় ২৩:৩০
পৌছানোর সময় ০৬:২০ (প্রতিদিন)
  • সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৮)
ছাড়ায় সময় ০৭:০০
পৌছানোর সময় ১২:১৫ (বুধবার বন্ধ)
  • চট্টগ্রাম মেইল (০২)
ছাড়ায় সময় ২২:৩০
পৌছানোর সময় ০৭:২৫ (প্রতিদিন)
  • কর্ণফুলী এক্সপ্রেস (৪)
ছাড়ায় সময় ০৮:৩০
পৌছানোর সময় ১৮:০০ (প্রতিদিন)
  • চট্টলা এক্সপ্রেস (৬৪)
ছাড়ায় সময় ১৩:০০
পৌছানোর সময় ২০:৫০ (মঙ্গলবার বন্ধ)

বিমান

বিমানসমূহ:

  • ইউএস বাংলা
  • বাংলাদেশ বিমান
  • নভো এয়ার

(ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে বিমান সুবিধা পাবেন)

চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার উপায়

বাস

বাস স্টান্ড:-
  • বদ্দার হাট

বাস সমূহ:-

  • পূবালী
  • পূর্বানী

বান্দরবন থেকে আমিয়াখুম

আমিয়াখুম সরাসরি যাওয়ার উপায় না থাকায় নির্দিষ্ট কিছু রুট এবং দক্ষ গাইডের সহায়তায় ট্রেকিং এর মাধ্যমে যেতে হবে।
প্রথমত, আপনাকে বান্দরবন থেকে বাস কিংবা জিপে থানচি যেতে হবে। থানচি যেতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগবে।
দ্বিতীয়ত, যেহেতু গাইড ব্যতিত প্রবেশ নিষেধ, তাই প্রশাসন কর্তৃক রেজিস্টারকৃত একজন গাইড ঠিক করুন। যা থানচিতেই পেয়ে যাবেন। উল্লেখ্য গাইড আপনাদের প্রশাসন কর্তৃক অনুমতি ও আইনি ব্যবস্থা জনিত সকল কাজ করে দেবে।

থানচি থেকে আমিয়াখুম রুটসমূহ এবং বর্ণনা:

রুট-০১: থানচি > রেমাক্রি > নাফাখুম > জিন্নাহ পাড়া > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম।

  • থানচি থেকে নৌকা নিয়ে রোমাক্রি বাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিন।
  • রোমাক্রি নেমে হাটা ধরুন নাফাখুম ঝর্ণার উদ্দেশ্য। (প্রায় আড়াই থেকে ৩ ঘন্টার হাটা পথ)  
  • নাফাখুম ঝর্ণা দেখে সেখান থেকে সাজিয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিন। (যা প্রায় ৪-৫ ঘন্টার হাটা পথ)
  • সাজিয়াপাড়াতে রাত কাটিয়ে পরেরদিন সকাল সকালে উঠে সাজিয়াপাড়া থেকে আরও একজন লোকাল গাইড নিয়ে আমিয়াখুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। (গাইড খরচ প্রযোজ্য)
  • প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিনঘন্টা হাটলেই পেয়ে যাবেন আমিয়াখুম ঝর্ণা।

ফেরার পথে-

আমিয়াখুম দেখার পর আবার সাজিয়াপাড়া এসে রাত কাটিয়ে সকালে আবার আগের রুট অনুযায়ী থানচিতে ফিরে আসতে পারবেন।


রুট-০২: থানচি> রেমাক্রি> নাফাখুম> থুইসাপাড়া> দেবতাপাহাড়> আমিয়াখুম

  • থানচি থেকে নৌকা নিয়ে রোমাক্রি বাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিন।
  • রোমাক্রি নেমে হাটা ধরুন নাফাখুম ঝর্ণার উদ্দেশ্য। (প্রায় আড়াই থেকে ৩ ঘন্টার হাটা পথ)  
  • নাফাখুম ঝর্ণা দেখে সেখান থেকে থুইসাপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিন। (যা প্রায় ৪-৫ ঘন্টার হাটা পথ)
  • সাজিয়াপাড়াতে রাত কাটিয়ে পরেরদিন সকাল সকালে উঠে সাজিয়াপাড়া থেকে আরও একজন লোকাল গাইড নিয়ে দেবতাপাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। বলে রাখা ভালো, দেবতাপাহাড় বান্দরবনের আদিম সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
  • দেবতাপাহাড় থেকে আমিয়াখুম ঝর্ণা।

ফেরার পথে-

আমিয়াখুম দেখার পর আবার সাজিয়াপাড়া এসে রাত কাটিয়ে সকালে রুট অনুযায়ী থানচিতে ফিরে আসতে পারবেন।

সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে রুট-২ সুবিধাজনক। তবে সুবিধাজনক রুট এবং আশেপাশের জায়গাগুলো ভালোভাবে দেখার জন্য গাইডের সাথে খুব ভালোভাবে কথা বলে ও দরদাম ঠিক করে নিতে কোনরূপ দ্বিধা করবেননা।


থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

(থাকা খাওয়ার জন্য আদিবাসী পাড়ায় সবরকমের ব্যবস্থা রয়েছে।)

আবাসিক পাড়া সমূহ
  • রেমাক্রি
  • নাফাকুম পাড়া
  • জিনাপাড়া
  • থুইসাপাড়া

(যাত্রাপথে কোন আবাসিক হোটেল না থাকায় আদিবাসীদের পাড়াগুলোতে থাকতে হবে। সেজন্য উক্ত আবাসিক পাড়া সমূহের বাড়ির মালিকের সাথে সরাসরি কথা বলে কিংবা গাইডের সহযোগিতা নিয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন।)

রেস্টুরেন্টসমূহ

পাড়ার যেকোনো জায়গায় কিংবা আবাসিক বাড়িতে খাওয়ার সুবিধা পাবেন।

 


আমিয়াখুম ভ্রমণের সর্বনিম্ন খরচের প্রাথমিক ধারণা-

  • ঢাকা থেকে বান্দরবনের বাস ভাড়া:  ৭০০/= টাকা
  • বান্দরবান থেকে থানচি:  রিজার্ভ জিপ- ৫৫০০/= টাকা এবং বাস- জনপ্রতি ২০০/= টাকা
  • থানচি থেকে রেমাক্রি: রিজার্ভ নৌকা- ৪০০০/= টাকা
  • গাইড খরচ: ৪৫০০/= টাকা
  • খাবার খরচ: আদিবাসীদের ঘরে প্রতিবেলা- ১২০/= টাকা
  • থাকার খরচ: আদিবাসীদের ঘরে- ১৫০/= টাকা

উল্লেখ্য, উক্ত তালিকাসমূহ শুধুমাত্র সর্বনিম্ন ভাড়ার ধারনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবর্তনশীল। তাই সঠিক তথ্যানুযায়ী দরকষাকষি করে নেবেন।


আমিয়াখুম ভ্রমণের সুবিধা হল

  • উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
  • সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশ।
  • পরিবার/দম্পতি বা বন্ধুদের সাথে উপযুক্ত সময় কাটানোর সুবিধা।

পরামর্শ: প্রথমত, গাড়ি বা নৌকাভ্রমণ, হোটেলবুকিং, খাবার কিংবা কোন কিছু কেনার পূর্বে দরকষা কষিতে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। এছাড়াও-

  • প্রয়োজনে, পানির বোতল, ছাতা বা রেইনকোট, ওয়াটার প্রুফ ব্যাগ এবং মোবাইল কাভার নিন।
  • মোবাইল, টর্চ, পাওয়ারব্যাংক সবকিছুতে ফুলচার্জ দিয়ে নেবেন।
  • স্থানীয় গাইডের সাহায্যে পুরো অঞ্চল সুন্দর ভাবে ঘুরতে পারবেন।

দৃষ্টি আকর্ষণ

যেকোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এই সব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকে ও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের,দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্ব ও আমাদের।

সতর্কতা:

হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই উল্লিখিত তথ্য বর্তমানের সাথে কনোরুপ মিল নাও থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহকরে আপনি কোথাও ভ্রমণেযাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন।

বি.দ্র: যেকোনো সমস্যায়, বাংলাদেশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ কল করুন।


যেকোন তথ্য অথবা ভ্রমণ সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন অথবা কমেন্ট করুন-
→ ইমেইল – admin@biratbazar.com

 

নতুন নতুন আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ইউটিউব এবং সোশ্যাল চ্যানেলে
→ ইউটিউব – https://www.youtube.com/@BiratBazar
→ ফেইসবুক – https://www.facebook.com/BiratBazarOfficial
→ টুইটার – https://twitter.com/BiratBazar
→ ইন্সটাগ্রাম – https://www.instagram.com/biratbazar/
→ থ্রেডস – https://www.threads.net/@biratbazar
→ লিংকড ইন – https://www.linkedin.com/company/biratbazar

Leave a Reply