ল.সা.গু থেকে গ.সা.গু

ল.সা.গু থেকে গ.সা.গু (L.C.M to H.C.F)


আমরা অনেক সময় ল.সা.গু এবং গ.সা.গু করতে গেলে বুঝতে পারিনা কিভাবে ল.সা.গু হবে এবং কিভাবে গ.সা.গু হবে। অনেক সময় ল.সা.গু কে গ.সা.গু এবং গ.সা.গু কে ল.সা.গু হিসেবে করে ফেলি। কেননা দুটির কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য একই ধরণের। নিম্নে বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যাক কোনটি কোনটা-

সহমৌলিক: ২ বা ততোধিক সংখ্যার মধ্যে যদি ১ বাদে অন্য কোনো সাধারণ গুণনীয়ক না থাকে তবে সংখ্যাগুলোকে পরস্পরের সহমৌলিক সংখ্যা বলা হয়।

ল.সা.গু (Lowest Common Multiple): ল.সা.গু হলো লঘিষ্ট সাধারণ গুণিতক। দুই বা ততোধিক সংখ্যার ক্ষুদ্রতম সাধারণ গুণিতককে তাদের ল.সা.গু বলে।

গুণিতকের মাধ্যমে ল.সা.গু নির্ণয়

যেমন:-

২, ৪, ৮ এর ল.সা.গু নির্ণয়-
২ এর গুণিতক হলোঃ ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬ ইত্যাদি।
৪ এর গুণিতক হলোঃ ৪, ৮, ১২ ইত্যাদি।
৮ এর গুণিতক হলোঃ ৮, ১৬, ২৪ ইত্যাদি।
দেখা যাচ্ছে, ২, ৪, ৮ এর সাধারণ গুণিতক হলো ৮, ১৬ ইত্যাদি। এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সাধারণ গুণিতক ৮। 
∴ তাই ২, ৪, ৮ এর ল.সা.গু ৮।

মৌলিক গুণনীয়কের সাহায্যে ল.সা.গু নির্ণয়:

১৮, ১২ এর ল.সা.গু নির্ণয় করি।

১। সংখ্যাগুলোকে নিচের চিত্রের মতো লিখি:

২। সংখ্যাগুলোকে সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক দ্বারা ভাগ করি। ভাগফলগুলোর সংখ্যাগুলোকে নিচের চিত্রে দেখানো হয়েছে।

৩। যদি সবগুলো সংখ্যাকে ভাগ করার মতো কোন মৌলিক গুণনীয়ক না থাকে তাহলে অন্তত ছয়টি সংখ্যাকে ভাগ করা থাকে এমন একটি মৌলিক গুণনীয়ক দ্বারা ভাগ করি।

৪। অবিভাজ্য সংখ্যাটিকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি।

৫। এভাবে যদি আর ভাগ করা না যায়, মৌলিক গুণনীয়ক গুলো গুণ করি: (২ × ৩ × ৩ × ২ × ৭) = ২৫২

সুতরাং ১৮, ১২, ১৪ এর ল.সা.গু –  ২৫২।


আবার ধরুন আপনাকে ২ বা ততোধিক মৌলিক অথবা সহমৌলিক সংখ্যার ল.সা.গু বের করতে বললে ল.সা.গু হবে সংখ্যাগুলোর গুণফলের সমান।

উদাহরণ-

১। ২, ৩ ও ৭ এর ল.সা.গু নির্ণয় কর।
   ২, ৩, ৭ মৌলিক সংখ্যা হবে = (২ × ৩ × ৭) = ৪২
২। ৩, ৪ ও ৫ এর ল.সা.গু নির্ণয় কর।

   ৩, ৪ ও ৫ সহমৌলিক সংখ্যা হওয়ায় এদের ল.সা.গু হবে = (৩ × ৪ × ৫) = ৬০
৩। ১২, ১৮, ২০ ও ১০৫ এর ল.সা.গু কত?
নির্ণেয় ল.সা.গু = (২ × ২ × ৩ × ৫ × ৩ × ৭) = ১২৬০।
৪। ৮, ১২, ৩৬, ৭২, ১৪৪ এর ল.সা.গু কত?
নির্ণেয় ল.সা.গু = (২ × ২ × ২ × ৩ × ৩ × ২) = ১৪৪।

গ.সা.গু নির্ণয়

গ.সা.গু (Highest Common Factor): গ.সা.গু হলো গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। দুই বা ততোধিক সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণনীয়ককে ঐ সংখ্যাগুলোর গ.সা.গু বলে।

যেমন:

∗ ২৮, ৪৮ ও ৭২ এর গ.সা.গু নির্ণয় করি।

এখানে,
      ২৮ এর গুণনীয়কগুলো হলো – ১, ২, ৪, ৭, ১৪, ২৮
      ৪৮ এর গুণনীয়কগুলো হলো – ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৮, ১২, ১৬, ২৪, ৪৮
      ৭২ এর গুণনীয়কগুলো হলো – ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৮, ৯, ১২, ১৮, ২৪, ৩৬, ৭২।
      এখানে ২৮, ৪৮, ৭২ এর সাধারণ গুণনীয়কগুলো হল ১, ২, ৩, ৪। এদের মধ্যে গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়কটি হলো – ৪। 
      ∴ ২৮, ৪৮ ও ৭২ এর গ.সা.গু – ৪।

একটি সমাধান করে বুঝা যাক গ.সা.গু কিভাবে করে-

♦ ৫৬, ২৮ এবং ৪২ এর গ.সা.গু নির্ণয়।

১। ৫৬, ২৮, ৪২ কে নিচের চিত্রের মতো করে লিখি।

২। সংখ্যাগুলোকে সাধারণ গুণনীয়ক দ্বারা ভাগ করি। অর্থাৎ যে সংখ্যা দিয়ে ৫৬, ২৮, ৪২ কে ভাগ করা যাবে তা দিয়ে ভাগ করি।

৩। যখন সবগুলো সংখ্যাকে কোন সংখ্যা দ্বারা আর ভাগ করা যাবে না তখন ভাগ করা বন্ধ করবো। যেমন:- ৪, ২ ও ৩ সংখ্যাগুলো ১ বাদে অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা একসাথে বিভাজ্য নয়।

৪। সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কগুলো গুণ করি: (২ × ৭) = ১৪।

∴ ৫৬, ২৮ ও ৪২ এর গ.সা.গু হলো – ১৪।

যদি সংখ্যাগুলোকে ১ ব্যতীত অন্য কোনো সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা না যায় তবে ঐ সংখ্যাগুলোর গ.সা.গু হবে ১।

যেমন:-

১। ৫, ৪, ৯ এর গ.সা.গু নির্ণয়।


∴ ৫, ৪, ৯ এর গ.সা.গু = (৫ × ৪ × ৯) = ১।
২। ৪০, ৬০, ৮৮ এর গ.সা.গু নির্ণয়।
∴ নির্ণেয় গ.সা.গু = (২ × ২) = ৪।
৩। ৩৬, ৫৪ ও ৯০ এর গ.সা.গু নির্ণয়।

∴ নির্ণেয় গ.সা.গু = (২ × ৩ × ৩) = ১৮।
৪। ৩২, ৪৮, ৫৬ এবং ৮০ এর গ.সা.গু নির্ণয়।
এখানে ৪, ৬, ৭ এবং ১০ একসাথে আর কোন সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয়।
∴ ৩২, ৪৮, ৫৬, ৮০ এর গ.সা.গু = (২ × ২ × ২) = ৮।

সহজ ভাবে ল.সা.গু এবং গ.সা.গু কে বুঝতে হলে বুঝতে হবে এগুলো অর্থ কি। যেমন- ল.সা.গু অর্থ লঘিষ্ট সাধারণ গুণিতক। যার মানে নিঃশেষে বিভাজ্য সকল গুণিতক সংখ্যার গুণফল। আর গ.সা.গু অর্থ গরিষ্ট সাধারণ গুণিতক। যার মানে গড় নিঃশেষে বিভাজ্য সকল গুণিতক সংখ্যার গুণফল। ল.সা.গু করা হয় ছোট ছোট সংখ্যাগুলোকে ভেঙ্গে তার গুণিতক বের করে তাদের মাঝে গুণ করে। আর গ.সা.গু করা হয় বড় বড় সংখ্যা নিয়ে।

Leave a Comment

Recent Posts

চিংড়ি ঝর্ণা

বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় এই চিংড়ি ঝর্ণার অবস্থান। মূলত বগালেক থেকে কেওক্রাডং এর মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় ঘণ্টাখানেক পাহাড়ি পথ… Read More

3 days ago

Chingri Falls

Chingri Jharna, located in the Ruma Upazila of Bandarban district in Bangladesh, is situated roughly an hour's hike along the… Read More

3 days ago

বগালেক

বগালেক যা বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে ১৫ কি.মি দূরে কেওক্রাডং পাহাড়ের কোল ঘেসে অবস্থিত। আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছরেরও… Read More

3 weeks ago

Bogalek

Which is located at the foothills of Keokradong Hills, 15 km from Ruma Upazila of Bandarban District. More than 2,000… Read More

3 weeks ago

গ্রেফতার কাকে বলে এবং গ্রেফতারের পদ্ধতি কি

ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ এর ৪৬ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তি কথা বা কাজের দ্বারা হেফাজতে আত্মসমর্পণ না করলে পুলিশ অফিসার… Read More

3 weeks ago

আমিয়াখুম জলপ্রপাত

বাংলাদেশের 'নায়াগ্রা ফলস' খ্যাত আমিয়াখুম জলপ্রপাত। যা বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা নাক্ষিয়ং নামক স্থানে অবস্থিত। বিভিন্ন অঞ্চলে… Read More

2 months ago