রকেট সাইন্স- বিজ্ঞানের শৈল্পীক বিষয় গুলো নিয়ে কম বেশি আমাদের সবার নতুন নতুন তথ্য জানার ইচ্ছা বা আগ্রহ সব সময় থাকে প্রবল। প্রতিদিনের নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথার যেন শেষ নেই।
চলুন আজ আপনাদের কাছে বিজ্ঞানের অসংখ্য আবিষ্কারের মধ্যে একটি আবিষ্কার নিয়ে কথা বলব যাকে নিয়ে বিজ্ঞানের এক অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। যার বদৌলতে বিজ্ঞান মানুষের কাছে উন্নতির এক আশীর্বাদ হয়ে আছে। আর তার নাম হল রকেট।
আমরা প্রায় সময় পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাই দূর আকাশে ক্ষুদ্র কিছু ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে সোজা পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ইহা আর অন্য কিছু নয়। ইহা রকেট নামে পরিচিত।
চলুন রকেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।
রকেট কি?
রকেট হল বিশেষ এক ধরনের প্রচলন কৌশল। ইহা এমন এক ধরনের যান যা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থগুলোকে জ্বলানির মাধ্যমে শক্তিতে রুপান্তর করে সেই উৎপাদিত শক্তি যান এর নির্গমণ পথে বের করে দেয়। এর ফলে উৎপন্ন ঘাতবলের কারণে রকেট বিপরীত দিকে প্রবল বেগে চলতে থাকে। এই গতি নিউটনের গতির ৩য় সূত্রের সাথে সামঞ্জস্য। অর্থাৎ রকেটের গতির মূলনীতি হিসেবে নিউটনের এই সূত্র কে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
মহাশূন্যে রকেটের কর্মদক্ষতা বায়ূমন্ডলের তুলনায় বেশি। তাই বহুধাপ বিশিষ্ট রকেটগুলো পৃথিবীর মুক্তিবেগ অর্জনের মাধ্যমে যে কোন উচ্চতায় যেতে পারে। মূলত রকেট ইঞ্জিনগুলো হাল্কা আর অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ায় বেশি ত্বরঙ্গের সৃষ্টি করতে পারে। রকেট তার উড্ডয়ণ পরিচালনা সঠিক ভাবে করার জন্য ভরবেগ, এয়ারফয়েল, প্রতিক্রিয়া ইঞ্জিন, গিম্বল থ্রাস্ট, ভরবেগ চাকা, নিষ্কাশন স্রোতের বিচ্যুতি, ঘূর্ণন এবং অভিকর্ষের উপর নির্ভর করে চলে।
যন্ত্রাংশঃ
রকেটে যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে পেলোড, বৈজ্ঞানীক যন্ত্রপাতি, মহাশূন্যচারী, নিয়ন্ত্রণ ও দিক নির্ধারণ ব্যবস্থা।
রকেট ইঞ্জিনঃ
রকেট ইঞ্জিন হল রি-একশন ইঞ্জিন। যার নীতি হল, যে জ্বলানীটুকু থাকে তা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে পিছন দিয়ে বের হয়ে আসে। যার ফলে রকেট সামনের দিকে চলতে থাকে। রকেটের এই শক্তিকে পাউন্ডের মাধ্যমে মাপা যায়। অর্থাৎ এক পাউন্ডে বস্তুকে মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে স্থির রাখতে যতটুকু বল দরকার ততটুকু।
রকেটে ব্যবহৃত জ্বলানিঃ
রকেটে কিরকম জ্বালানি ব্যবহার করা হবে তার নিয়মানুসারে ২ টী শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
কঠিন পদার্থের জ্বালানিঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম রকেটেই কঠিন পদার্থের জ্বালানী ব্যবহার করা হয়। রকেট সর্বপ্রথম চীনা দের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়। কঠিন জ্বালানী হিসেবে বারুদ ব্যবহার শুরু করলেও ইহা বিপদজনক হওয়ায় এর পরিবর্তে অন্য কঠিন জ্বলানী ব্যবহার শুরু হয়। রকেট ইঞ্জিনের একটা বড় সমস্যা হল এটি একবার চালু হলে আর থামানো সম্ভব হয় না আর নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব না। তাই এধরনের কঠিন পদার্থ রকেট মিসাইল তৈরিতে বা মহাকাশে সহায়ক হিসেবে পাঠাতে ব্যবহার করা হয়।
তরল পদার্থে জ্বালানীঃ
১৯২৬ সালে রবার্ট গডার্ড প্রথম এধরনের রকেট আবিষ্কার করেন। রকেট তৈরি করার সময় রবার্ট জ্বালানী হিসেবে পেট্রোল ও তরল অক্সিজেন ব্যবহার করেছিলেন যা কম্বাশন চেম্বার (Combustion Chamber) এ পাম্প করা হয়। এই দুটি উপাদানের ফলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয় তার চাপের ফলে রকেট সামনের দিকে যাওয়া শুরু করে। রসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রসারিত গ্যাস রকেটে থাকা সরু নলের পিছন দিয়ে প্রচন্ড বেগে বের হয়ে এসে। যার ফলে রকেটও প্রচন্ড বেগে চলতে থাকে।
রকেট বডিঃ
রকেট বডির কাজ হল সরবরাহ করা। জ্বালানী সরবরাহ করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। আবার বায়ূ মন্ডলের জোন ভেদ করার জন্যেও এটি ব্যবহার করা হয়।
নোজ কোণঃ
নোজ কোণ হল রকেটের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। রকেটে নোজ কোণের এই আকৃতি তৈরি করা হয়েছে জোর করে বায়ূমন্ডলের জোন ভেদ করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। কোন রকেট কত দ্রুত বায়ূমন্ডল ভেদ করবে তা নির্ভর করে এই নোজ কোণের আকৃতির উপর।