Categories: Travel Guide

টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর


বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে  সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় ভারতের মেঘালয়ের  খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এক বিশাল শীতল জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়গুলো থেকে মোট ৩০ টি ঝর্ণা এসে মিশেছে এখানে। স্থানীয় ভাষায় এই হাওর “নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল” এবং রামসার স্থান হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি/হাওর, যা প্রায় ১২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম “মাদার ফিশারী” হিসেবে বিস্তৃত। এই হাওরে রয়েছে প্রায় ৪৬ টি গ্রাম। বর্ষায় হাওরের সব কিছু ডুবে যাওয়ায় এই গ্রামগুলোকে দ্বীপগ্রাম মনে হয়। টাঙ্গুয়ার হাওরে রয়েছে ২৮০২.৩৬ হেক্টর এলাকাজুড়ে জলাভুমি।

 


টাঙ্গুয়ার হাওরের ইতিহাস

সুনামগঞ্জের দুটি উপজেলার ১৮টি মৌজার ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে প্রায় ১২,৬৬৫ হেক্টর এলাকাজুড়ে টাঙ্গুয়ার হাওর বিস্তৃত। তবে নলখাগড়া বন, হিজল করচ বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওরটির আয়তন প্রায় ২০.০০০ একর। মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার হলেও বাকি অংশ বসতি ও কৃষিজমি। এর ভিতর প্রায় ৮৮ টি গ্রাম আছে। একসময় প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আধার হিসেবে পরিচিত থাকলেও ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ”প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা” (Ecologically Critical Area) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এতে করে দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের ইজারাদারির অবসান হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে দ্বিতীয় “রামসার স্থান” (Ramsar Site) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম “রামসান স্থান” সুন্দরবন। টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইসিইউএন) কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় হাওর এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর পর ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর থেকে হাওরের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্থানীয় জেলা প্রশাসন। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে সুইস অ্যাজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) এবং আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইসিইউএন) যৌথভাবে “টাঙ্গুয়ার হাওর সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা” প্রকল্প পরিচালনা করছে।

বর্ষায় হাওর পরিপূর্ণ থাকলেও শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে কমে যায়। ফলে এখানকার প্রায় ২৪টি বিলের পাড় (স্থানীয় ভাষায় “কান্দা”) জেগে উঠলে শুধু কান্দার ভিতর অংশেই আদি বিল থাকে, আর শুকিয়ে যাওয়া অংশে স্থানীয় কৃষকেরা রবিশস্য ও বোরো ধানের আবাদ করার পাশাপাশি এলাকাটি গোচারণভূমি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তবে ২০১২ সালের পর থেকে কান্দাগুলো দেখা যায় না,তাই স্থানীয় এনজিও ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেখানে বাঁশ কিংবা কাঠের ছোট ছোট বিশ্রাম-দণ্ড পুঁতে দেয়া হয়েছে । হাওরে ছোট বড় প্রায় ৪৬ টি দ্বীপের মত “ভাসমান গ্রাম” বা “দ্বীপ গ্রাম” আছে।


টাঙ্গুয়ার হাওরের দর্শনীয় স্থানসমূহ:

ট্যাকের হাট

ট্যাকের হাট ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি বাজার। ট্যাকের ঘাটে নৌকা নোঙ্গর করার পর বিকেলের সময়টা সবাই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা বেলায় হালকা খাবার বা ভাজা পোড়া খেতে সবাই ভিড় জমায় ট্যাকের হাটে। ট্যাকের ঘাট থেকে ০৩-০৪ মিনিটের হাটার দুরুত্বে এই বাজারের অবস্থান। যারা বাজেট ট্যুরে আসেন তারা ট্যাকের হাটে কম দামে ভালো মানের খাবার পেয়ে যাবেন।

লাকমা ছড়া

 

পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের আস্তরন। এই সবুজ আস্তরনের বুক বেয়ে নেমে এসেছে এক ঝর্ণা, যার নাম লাকমা। এই ঝর্নাটি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে। লাকমা ঝর্ণাটি বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়না। লাকমা ঝর্ণার পানিগুলো বাংলাদেশে বয়ে আসে। লাকমা ঝর্ণার পানি গিয়ে পড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে। যে পথ দিয়ে পানি গিয়ে হাওরে পড়ে তাকে বলে লাকমা ছড়া। ছড়ার শীতল জল আপনাকে প্রাণবন্ত করবে। ছড়ায় বড় বড় পাথর ছড়ার সৌন্দর্যকে কয়েক গুন বৃদ্ধি করেছে। ট্যাকের ঘাটে নৌকা থেকে নেমে একটা অটো বা মোটর সাইকেল নিয়ে লাকমা ছড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে যেতে পারেন।
ওয়াচ টাওয়ার
 
ওয়াচ টাওয়ার থেকে হাওরকে অন্যভাবে উপভোগ করা যায়। ছুটির দিন গুলোতে বেশ ভিড় থাকে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে। বলাই নদীর পাশ ঘেঁসে হিজল বনে ওয়াচ টাওয়ারের অবস্থান। প্রায় সব নৌকা একবারের জন্য হলেও ওয়াচ টাওয়ারের পাশে যায়। ওয়াচ টাওয়ারের আশে পাশের পানি বেশ স্বচ্ছ। পানি স্বচ্ছ বলে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ পর্যটকই এইখানে গোসল সেরে নেন। এইখানে পানিতে নেমে চা খাওয়ার আছে বিশেষ সুযোগ। ছোট ছোট নৌকায় করে হাওরের স্থানীয় লোকজন চা, বিস্কুট বিক্রয় করে। আপনি চাইলে বড় নৌকা থেকে নেমে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ঘুরতে পারবেন।
নীলাদ্রি লেক
 
নীলাদ্রি লেক স্থানীয় মানুষদের কাছে পাথর কুয়ারি নামে পরিচিত। এই লেকটি এবং তার আশ পাশের এলাকা বাংলার কাশ্মীর নামেও পরিচিত। নীলাদ্রি লেকের বর্তমান নাম “শহীদ সিরাজী লেক” । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ গেরিলা যোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বীর বিক্রম এর নামানুসারে এই লেকের নামকরন করা হয়। কিন্তু ট্রাভেলার কমিউনিটিতে এটি নীলাদ্রি লেক হিসেবেই বেশী পরিচিত। এই লেকের পানি খুব স্বচ্ছ। নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এই লেকে। আরো আছে কায়াকিং এর বিশেষ ব্যাবস্থা। ক্লান্তি দূর করার জন্য স্বচ্ছ ঠান্ডা লেকের জলে স্নান করে নিতে পারবেন। লেকের এক পাশ সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো ছোট ছোট বেশ কয়েকটি টিলা। আর অন্য পাশে রয়েছে সুউচ্চ সুবিশাল পাহাড়। পাহাড়, টিলা, লেকের স্বচ্ছ পানি প্রকৃতির এই সুন্দর মিতালী আপনাকে বিমোহিত করবে। এইখানে এসে আপনি হারিয়ে যেতে বাধ্য। ট্যাঁকের ঘাটে নৌকা থেকে নেমে সোজা হেঁটে চলে আসতে পারবেন নীলাদ্রি লেকে।
জাদুকাটা নদী
 
জাদুকাটা নদীর আদি নাম রেনুকা। কথিত আছে জাদুকাটা নদী পাড়ে কোন এক বধু তার পুত্র সন্তান জাদুকে কোলে নিয়ে নদীর অনেক বড় একটি মাছ কাটছিলেন। হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে নিজের সন্তান জাদুকেই কেটে ফেলেন। এই কাহিনী থেকেই পরবর্তীকালে এই নদীর নাম হয় জাদুকাটা নদী। এ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের জৈন্তিয়া পাহাড়। এ নদীর পানি অনেক ঠান্ডা, দুপুর পেরলে নঈতে ডূব দিতে একদম ভূলবেন না। তবে নদীর মাঝে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। মাঝে অনেক স্রোত থাকে। জাদুকাটার এক পাশে সুবিশাল পাহাড় উপরে নীল আকাশ আর নদীর স্বচ্ছ পানি এইগুলো মিলে অদ্ভূত এক ক্যানভাসের সৃষ্টি করে।
শিমুল বাগান
 
এটি বাংলাদেশের সব চাইতে বড় শিমুল বাগান। এ বাগানে প্রায় ৩০০০ শিমুল গাছ রয়েছে। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গা জুরে এই শিমুল বাগানের বিস্তৃতি। বসন্ত কালে শিমুল ফুলের রক্তিম আভায় ছেয়ে যায়। শিমুল বাগানের অপর পাশে মেঘালয়ের সুবিশাল পাহাড় মাঝে সচ্ছ নীল জলের নদী জাদু কাটা আর এই পাশে রক্তিম শিমুল ফুলের আভা আপনার মন নেচে উঠবে।
বারিক্কা টিলা
 
মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্তের এই পাশে সবুজে মোড়ানো এক টিলার নাম বারেকের টিলা বা বারিক্কা টিলা। উঁচু এই টিলার একপাশে ভারতের সুউচু পাহাড়, অন্য পাশে স্বচ্ছ জলের নদী জাদুকাটা। বারিক্কা টিলা থেকেই দেখতে পারবেন মেঘ পাহাড়ের মিলবন্ধন। বারিক্কা টিলার উপর থেকে জাদুকাটা নদীর দিকে তাকালে আপনি যে নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পারবেন তার রেশ থেকে যাবে বহুদিন। বারিকা টিলার পাশে দুইটি মিষ্টি পানির ছড়া রয়েছে। বর্ষাকাল ছাড়া এই ছরাগুলো পানি থাকে না বললেই চলে। ছড়া গুলো দেখতে খানিকটা ট্র্যাকিং করতে হবে। এছাড়াও ভারতের পাহাড়ে রয়েছে শাহ্ আরেফিনের মাজার এবং রয়েছে একটি তীর্থ স্থান। বছরের নির্দৃষ্ট দিনে এইখানে ওরস এবং পূণ্য স্নানের আয়োজন হয়। বারিক্কা টিলার পাশেই জাদুকাটা নদী।
হিজল বন
 
টাঙ্গুয়ার হাওরের হিজল বনটি দেশের সবচাইতে পুরানো হিজল বন। বলাই নদীর পাশেই আছে এই হিজল বন। হাওরের মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এই হিজল বন। টাঙ্গুয়ার হাওরে আছে শতবর্ষীয় হিজল গাছ। বর্ষায় গলা সমান পানিতে ডুবে থাকা গাছে গাছে ঝুলে থাকে হিজল ফুল।
হাসন রাজার যাদুঘর সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর ঠিক পাশেই রয়েছে মরমী কবি হাসন রাজার বাড়ি। হাসন রাজা একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার ছিলেন। জমিদারির পাশাপাশি তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছিলেন। সে সকল গান এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। বর্তমানে সুনামগঞ্জের হাসন রাজার বাড়িটি যাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এই যাদুঘরে হাসন রাজার স্মৃতি বিজড়িত অনেক জিনিসপত্র আছে। এইখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন মরুমী কবি হাসন রাজার রঙ্গিন আলখাল্লা, তিনি যেই চেয়ারে বসে গান রচনা করতেন সেই চেয়ার। তার ব্যবহৃত তলোয়ার। আরো আছে চায়ের টেবিল, কাঠের খড়ম, দুধ দোহনের পাত্র, বিভিন্ন বাটি, পান্দানি, পিতলের কলস, মোমদানি, করতাল, ঢোল, মন্দিরা, হাতে লেখা গানের কপি, ও হাসন রাজার বৃদ্ধ বয়সের লাঠি। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ফেরার পথে ঘুরে যেতে পারবেন হাসন রাজার যাদুঘর।
ডলুরা শহীদদের সমাধি সৌধ
 
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ডলুরা ছিল সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার অন্যতম রণাঙ্গন। এই রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে যারা শহীদ হন তাদের কয়েকজনকে এইখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে শহীদদের স্মরনে এইখানে স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়। এইখানে ৪৮ জন শহীদের সমাধি রয়েছে। সুউচু পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়ে আছে ১৯৭১ এর রক্তাত্ত সংগ্রামের স্মৃতি চিহ্ন।
পাইলগাঁও জমিদারবাড়ি

সাড়ে পাঁচ একর জমির উপর ৩০০ বছর আগে তৈরি করা হয় পাইলগাও জমিদার বাড়ি। কালের পরিক্রমায় ক্ষয়ে যাওয়া জমিদার বাড়িটি আজও সৌন্দর্য, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারক। এই জমিদার বাড়ির অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ০৯নং ইউনিয়নে। এই জমিদার বাড়ির প্রতিটি ঘর যেন এক অন্যরকম নান্দনিক স্থাপত্য শিল্পের সাক্ষী হয়ে আজো বিদ্যমান রয়েছে। পাইলগাও জমিদার বাড়ি প্রাচীন পুরাকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন।

টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য

টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আশ্চর্যতম হলো স্থানীয়,বিদেশী এবং বিরল প্রজাতির বিভিন্ন জাতের পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পাখিদের দেখা মেলে এই হাওরে। ২০১১-এর পাখিশুমারি অনুযায়ী এই হাওরের অন্তর্ভুক্ত চটাইন্নার বিল ও তার খাল, রোয়া বিল, লেচুয়ামারা বিল, রুপাবই বিল, হাতির গাতা বিল, বেরবেরিয়া বিল, বাইল্লার ডুবি বিল, তেকুন্না বিল, আন্না বিল ইত্যাদি বিলসমূহে প্রায় ৪৭ প্রজাতির জলচর পাখিদের মোট ২৮,৮৭৬টি পাখি গণনা করা হয়। এই শুমারিতে অন্যান্য পাখির পাশাপাশি কুট, মরচেরং ভুতিহাঁস, পিয়ংহাস, সাধারণ ভুতিহাঁস, পান্তামুখী বা শোভেলার, লালচে মাথা ভুতিহাঁস, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, লেনজা, ডুবুরি, পানকৌড়ি ইত্যাদি পাখিরও দেখা মেলে। যার স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খ চিল, পাতি কুট ইত্যাদি অন্যতম। প্রায়শই এগুলো হাওর এলাকায় দেখা যায়।

জানুয়ারি ২০১২ অনুসারে-

অধ্যাপক আলী রেজা খান-এর বর্ণনানুযায়ী এই হাওরে সব মিলিয়ে আবাস রয়েছে প্রায়-

    • ২৫০ প্রজাতির পাখি
    • ১৪০ প্রজাতির মাছ
    • ১২’র বেশি প্রজাতির ব্যাঙ
    • ১৫০-এর বেশি প্রজাতির সরীসৃপ 
    • ১০০০-এরও বেশি প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী

পরবর্তীতে ২০১৯ সালের পাখিশুমারি অনুযায়ী হাওর এবং এর আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০৮ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে।

প্রতি বছরই টাঙ্গুয়ায় সমগ্র দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিরল কয়েক জাতের পাখিদের মধ্যে রয়েছে-

  • বৈকাল তিলিহাঁস
  • বেয়ারের ভুঁতিহাস
  • কালোলেজ জৌরালি

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দৃশ্যমান আটটি বেয়ারের ভুঁতিহাসের পাঁচটিই পাওয়া গেছে এই হাওরে।

বিরল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে রয়েছে-

  • প্যালাসেস ঈগল,
  • বড় আকারেরগ্রে কিংস্টর্ক
  • কালোপাখা টেঙ্গি
  • মোটাঠুঁটি ফাটানো
  • ইয়ার
  • মেটে রাজহাঁস
  • মাছমুরাল
  • লালবুক গুরগুরি
  • পাতি লালপা
  • গেওয়াল বাটান
  • লম্বা আঙুল চা পাখি
  • বড় গুটি ঈগল
  • বড় খোঁপা ডুবুরি
  • কালো গির্দি

এছাড়া রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির পাখি কুড়ুল , যা বাংলাদেশে এর নমুনাসংখ্যা প্রায় ১০০টির মতো।

সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী

টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি ছাড়াও সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীদের রয়েছে ৬ প্রজাতিরস্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সাপ, বিরল প্রজাতির উভচর, ৪ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি ইত্যাদি সহ আর নানা প্রজাতির প্রানী। বিলুপ্ত কাছিমের মধ্যে রয়েছে হলুদ কাছিম, কড়ি কাইট্টা, পুরা কাইট্টা। তবে বর্তমানে ভালো অবস্থানে রয়েছে জাত কাছিম ও ধুম কাছিম। এছাড়াও ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ, সারসারি ব্যাঙ, মার্বেল টোড ব্যাঙ এর দেখা মেলে এখানে। মার্বেল টোড ব্যাঙ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে বিরল হলেও টাঙ্গুয়ায় সহজপ্রাপ্য। এখানে জালবোরা, কোবরার দুটি জাত, দাঁড়াশ সাপ দেখা যায়।

মৎস্যসম্পদ

টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট বড় প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ হাওরের বিখ্যাত মাছের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে মহাশোল। মাছটির দুটো প্রজাতি রয়েছে,যার বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে Tortor এবং Torputitora।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে-

  • হিজল
  • করচ
  • বরুণ
  • পানিফল
  • হেলেঞ্চা
  • বনতুলসী
  • নলখাগড়া
  • বল্লুয়া
  • চাল্লিয়া
  • সিংড়া
  • শালুক
  • শাপলা
  • গুইজ্জাকাঁটা
  • উকল

উপরোক্ত সবকিছুর জন্য টাঙ্গুয়ার হাওর বর্তমানে পর্যটকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন শত শত পর্যটক নৌকা ভাড়া নিয়ে হাওরজুড়ে ভেসে বেড়ান। এছাড়াও অনেকে নৌকা নিয়ে হাওরেই রাতযাপন করেন। তাই, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্ষায় হাওর ভ্রমণ সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

কখন যাবেন
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষা এবং শীতকাল। বর্ষাকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় এর ৩০ টি ঝর্ণা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি, মৃদুমন্দ ঢেউ থেকে বয়ে আসা পানিতে হাওর কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। তখন  হাওরের বিশালতা দেখে মনে হয় বিস্তর সাগর। বর্ষাকালে জলরাশির ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে হিজল ও করচগাছের বন। তখন হাওয়ারের গ্রামগুলোকে মনে হয় যেন পানির ওপর ভেসে থাকা ক্ষুদ্র কিছু দ্বীপ।
শীতকালে যতদুর চোখ যাবে, পুরোটা জুড়েই থাকে সবুজ প্রকৃতি। থাকে হাওরের ভিতর চলা সাপের মত আঁকা বাঁকা নদী। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে অতিথি পাখি। শীত, বসন্তে শিমুল ফুল ফোটে বলে হাওরের শিমুল বাগান ছেয়ে যায় রক্তিম আভায়।
বিশেষ পরামর্শ
সুন্দরবনের পর টাঙ্গুয়ার হাওর আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘রামসার সাইট’। তাই আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই হাওর ভ্রমণকালে পরিবেশের যেন কোন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বর্ষাকালে যেকোনো সময়ে ঝড় শুরু হতে পারে। নৌকায় ভ্রমণকালীন আকাশে মেঘ ডাকলে বা বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে নৌকার ছইয়ের নিচে অবস্থান করতে হবে। এ ছাড়াও বন্যা কিংবা বড় কোনো ঝড়ের আশঙ্কা থাকলে সেসব সময়ে কোনোভাবেই হাওর ভ্রমণ করা উচিত নয়। দুর্ঘটনা এড়াতে আবহাওয়ার খবর জেনে এরপরেই ভ্রমণের দিন-তারিখ ঠিক করা উচিত। এছাড়াও অনুমতি ছাড়া স্থানীয়দের ছবি তোলা যাবে না। স্থানীয়দের সাথে তর্কে জড়ানো থেকে বিরত থাকবেন। যেখানে সেখানে খোসা বা প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস এবং বোতল ফেলা ঠিক নয়। যেহেতু আপনাকে জলাশয় এলাকার যাত্রার জন্য যেতে হবে তাই যথাসম্ভব ছোট ব্যাগ এবং হালকা জিনিসপত্র নেয়ার চেষ্টা করবেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, হালকা খাবার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী,পাওয়ার ব্যাংক রাখবেন। নৌকা ভাড়া করার সময় লাইফ জ্যাকেট, টয়লেট ব্যবস্থা, রান্নার চুলা, লাইট-ফ্যান, বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য শামিয়ানা ইত্যাদি ঠিকঠাক আছে কি না তা দেখে নিতে হবে। তাহিরপুর বাজারে আইপিএস ও লাইফ জ্যাকেট ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকায় যদি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও লাইফ জ্যাকেট না থাকে তবে সেগুলো ভাড়া করে নিতে হবে। এ ছাড়াও টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্ষাকালে বেশ শীতল বাতাস থাকে এবং রাতের বেলা কিছুটা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। তাই একটি চাদর কিংবা রাতে গায়ে দেওয়ার কাঁথা নেওয়া ভালো। আর হাওরের আশপাশের অঞ্চল ঘুরে দেখার সময় বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে নেওয়া উচিত।
  • নিজের ভোটার আইডি কিংবা জন্মসনদের কপি রাখবেন।
  • সাঁতার না জানলে পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন।
  • টাঙ্গুয়ার হাওর আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্বও আমাদের সকলের।
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে বেশকিছু জলাবন রয়েছে। এমন কিছু করবেন না যাতে এই বনের ক্ষতি হয়।
  • খরচ কমাতে চাইলে গ্রুপ ভিত্তিক ভ্রমণ করুন।
  • বজ্রপাতের সময় বোটের ছাদে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • যাদুকাটা নদীতে সাতার জানলেও কোনভাবেই লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না। জাদুকাটা নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত থাকে যা উপর থেকে বুঝা যায় না।
  • হাওরের মাছ, বন্যপ্রানী এবং পাখি শিকার থেকে বিরত থাকুন।
  • অতি উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করে এমন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
বিশেষ সতর্কতা
হাওরের অভয়াশ্রম এবং পর্যটকের নিরাপত্তার জন্য ২০০৩ সাল থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের সুবাদে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনসার সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকে। তাই মাছ ও পাখি শিকার, নেশাদ্রব্য বহন,ক্রয়-বিক্রয় কিংবা সেবন সহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন।

দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের দূরত্ব
ঢাকা ৩০৩ কি.মি.
রাজশাহী ৪১৫ কি.মি. (ঢাকা হয়ে গেলে)

৫৯৯ কি.মি. (কুষ্টিয়া হয়ে গেলে)

রংপুর ৪৬৫ কি.মি. (বগুড়া → সিরাজগঞ্জ → ঢাকা হয়ে গেলে)

৫৬৫ কি.মি. (বগুড়া → নাটোর → কুষ্টিয়া → নারায়ণগঞ্জ হয়ে গেলে)

সিলেট ১০৯ কি.মি.
ময়মনসিংহ ১৭২ কি.মি. (নেত্রকোনা হয়ে গেলে)
খুলনা ৫০৫ কি.মি.
বরিশাল ৪৬৭ কি.মি.
চট্টগ্রাম ৪২৬ কি.মি.

টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার উপায়

বাস ঢাকার বাসস্টান্ড সমূহ:-
  • মহাখালী
  • সায়েদাবাদ
  • ফকিরাপুল
  • গাবতলী
  • কল্যাণপুর

 (সন্ধ্যা ০৭.০০ টা থেকে রাত ১১.০০ পর্যন্ত বাস পাবেন) 

বাস সমূহ:-
  • শ্যামলী পরিবহন
  • মামুন পরিবহন
  • এনা পরিবহন
  • মিতালি পরিবহন
  • একতা এক্সপ্রেস
  • সৌদিয়া  পরিবহন
  • নূর এন্টারপ্রাইজ
ট্রেন

(ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি ট্রেন সুবিধা না থাকায় আপনাকে সিলেট পর্যন্ত ট্রেনে যেতে হবে।)

ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার ট্রেনসমূহ-
ঢাকা কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলস্টেশন থেকে সিলেট রেল স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনসমূহ-

  • পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯)
  • জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (৭১৭) 
  • উপবন এক্সপ্রেস (৭৩৯)
বিমান

(ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে সরাসরি বিমান সুবিধা না থাকায় আপনাকে সিলেট পর্যন্ত বিমানে যেতে হবে।)

সিলেট যাওয়ার বিমানসমূহ:-
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাওয়ার বিমানসমূহ-

  • বিমান বাংলাদেশ
  • ইউএস বাংলা 
  • নভোএয়ার
  • এয়ার এস্ট্রা

রাজশাহী থেকে যাওয়ার উপায়

বাস

(রাজশাহী থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন বাস,ট্রেন কিংবা বিমান সুবিধা না থাকায় আপনাকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ যেতে হবে।)

সুনামগঞ্জ যাওয়ার বাস স্টান্ডসমূহ:-

  • রাজশাহী বাস স্টান্ড

সিলেট যাওয়ার বাস সমূহ:-

  • হানিফ পরিবহন
  • শ্যামলী পরিবহন

(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল)

ট্রেন

(রাজশাহী থেকে সিলেটে সরাসরি কোনো ট্রেন সুবিধা না থাকায় আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর ট্রেনে যেতে হবে।)

ঢাকা যাওয়ার ট্রেনসমুহ:-

  • মধুমতি এক্সপ্রেস
  • সিল্কসিটি এক্সপ্রেস
  • পদ্মা এক্সপ্রেস
  • ধুমকেতু এক্সপ্রেস

(যেহেতু ঢাকা মেইল ট্রেন ধরতে হবে। তাই প্রথমে নাটোর থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেস দিয়ে ঢাকা যাওয়া ভালো)

বিমান সিলেট যাওয়ার বিমানসমূহ:
রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে সিলেট বিমানবন্দর যাওয়ার বিমানসমূহ-
  • ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স
  • নভোএয়ার

রংপুর থেকে যাওয়ার উপায়

বাস

(রংপুর থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন বাস,ট্রেন কিংবা বিমান সুবিধা না থাকায় আপনাকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ যেতে হবে।)

বাস স্টান্ডসমূহ:-

  • ঢাকা (কামার পাড়া) বাসস্টান্ড

বাস সমূহ:-

  • এনা পরিবহন
  • শ্যামলী পরিবহন
  • ডিপজল পরিবহন

(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল)

ট্রেন (রংপুর থেকে সুনামগঞ্জে সরাসরি কোনো ট্রেন সুবিধা না থাকায় আপনাকে আগে ঢাকা গিয়ে তারপর ট্রেনে যেতে হবে।)
ঢাকা যাওয়ার ট্রেনসমূহ:-
  • কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস
  • রংপুর এক্সপ্রেস
বিমান

(বিমানে সরাসরি সিলেট যেতে হলে রংপুর শহর থেকে ৪০ কিমি দূরে সৈয়দপুর বিমান বন্দর যেতে হবে।)

সিলেট যাওয়ার বিমানসমূহ:
সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে সিলেট বিমানবন্দর যাওয়ার বিমানসমূহ-

  • বিমান বাংলাদেশ
  • ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স
  • নভোএয়ার

সিলেট থেকে যাওয়ার উপায়

বাস

(সিলেট শহর থেকে নিম্নক্ত বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি হাওর যাওয়ার জন্য বাস কিংবা রিজার্ভ সার্ভিস পেয়ে যাবেন।)

সুনামগঞ্জ যাওয়ার বাস স্টান্ডসমূহ:-

  • সিলেট বাসস্টান্ড
  • কদমতলী
  • হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বর
  • সোভানি ঘাট

 

(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল)


চট্টগ্রাম যাওয়ার বাস সমূহ:-

  • এনা পরিবহন
  • সৌদিয়া পরিবহন

(যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল)

ময়মনসিংহ থেকে যাওয়ার উপায়

বাস (ময়মনসিংহ থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার উপায়)
ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার বাস সমূহ:-
  • নাছিরাবাদ পরিবহন

 (যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল)

ট্রেন

সিলেট যাওয়ার ট্রেন না থাকায় আপনাকে ঢাকা থেকে যেতে হবে।

খুলনা থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার উপায়

বাস (খুলনা থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন বাস,ট্রেন কিংবা বিমান সুবিধা না থাকায় আপনাকে সিলেট হয়ে যেতে হবে।)
সিলেট যাওয়ার বাস স্টান্ডসমূহ:-
  • সোনাডাঙ্গা
  • খুলনা বাস স্টান্ড

সিলেট যাওয়ার বাস সমূহ:-

  • হানিফ পরিবহন
  • মামুন এন্টারপ্রাইজ

 (যাত্রা পূর্বে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, পরিবহনগুলো আপনার গন্তব্য অবধি যাবে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। কেননা সময় পরিবর্তনের সাথে তথ্যগুলোও পরিবর্তনশীল)

ট্রেন

(খুলনা থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি ট্রেন সুবিধা না থাকায় আপনাকে ঢাকা পর্যন্ত যেয়ে সেখান থেকে সিলেট ট্রেনে যেতে হবে)

ঢাকা যাওয়ার ট্রেনসমূহ:-

  • সুন্দরবন এক্সপ্রেস

চিত্রাংদা এক্সপ্রেস/চিত্রা এক্সপ্রেস

বিমান সিলেট যাওয়ার বিমানসমূহ:-
  • ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স
  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

বরিশাল থেকে যাওয়ার উপায়

বাস (বরিশাল থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন বাস,ট্রেন কিংবা বিমান সুবিধা না থাকায় আপনাকে সিলেট হয়ে যেতে হবে।)
সিলেট যাওয়ার বাস স্টান্ডসমূহ:-
  • নাটুল্লাবাদ

সিলেট যাওয়ার বাসসমূহ:-

  • হানিফ পরিবহন

চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার উপায়

বাস বাস স্টান্ডসমূহ:-
  • বদ্দার হাট
বাস সমূহ:-
  • এনা পরিবহন

সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর

রুটসমূহঃ- সুনামগঞ্জ → তাহেরপুর → টাঙ্গুয়ার হাওর
সুনামগঞ্জ থেকে লেগুনা/সিএনজি/বাইক ভাড়া করে তাহিরপুর যেতে হবে। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়া যায়।
তবে শীতকালে পানি কমে যাওয়ায় আপনাকে লেগুনা/সিএনজি/বাইক যোগে যেতে হবে সোলেমানপুর। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নিতে পারবেন।

সুবিধাজনক রুট এবং আশেপাশের জায়গাগুলো ভালোভাবে দেখার জন্য গাইড কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিকট পরামর্শ করে নেবেন। সেইসাথে সকল ক্ষেত্রে দরদাম করতে একদম ভুলবেন না।


থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

(থাকা খাওয়ার জন্য হাউজবোটে সবরকমের ব্যবস্থা রয়েছে।)

হাউজবোট সমুহ হাওরের সকল দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য দিন কিংবা রাতের জন্য সুবিধামত ছোট, মাঝারি, বড় হাউজবোট পাওয়া যাবে।
 (ঘাটে নেমে নিজ দায়িত্বে পছন্দের বোট দরকষাকষি করে ট্রিপ প্লান, সুযোগ-সুবিধা জেনে নিয়ে বুকিং করুন।)
রেস্টুরেন্টসমূহ

হাউজবোটেই প্যাকেজ অনুযায়ী খাওয়ার সুবিধা পাবেন।

বি.দ্রঃ গাইড অথবা হাউজবোটের স্টাফদের আপনাদের কি প্রয়োজন তা বুঝিয়ে বললে সাধারণত তারাই সব কিছুর ব্যবস্থা করবে।

হাউজবোট ও নৌকার আনুমানিক ভাড়া-

  • সাধারণত এক রাত থাকা, সব বেলার খাবার ও টাঙ্গুয়ার হাওর সহ আশেপাশের সকল স্পট ঘুরে দেখার প্যাকেজ প্রিমিয়াম বোট গুলোর ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৬,০০০- ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • মোটামুটি মানের সেমি হাউজবোট গুলোর প্যাকেজ ৪,৫০০ – ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • এছাড়া পুরো হাউজবোট রিসার্ভ করলে মান ও ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ৪০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সাধারণত হাউজবোট গুলোর প্যাকেজে সবকিছুই অন্তর্ভূক্ত থাকে। শুধু ডে ট্রিপ হলে খরচ কিছুটা কম হবে।

উল্লেখ্য, উক্ত তালিকাসমূহ শুধুমাত্র সর্বনিম্ন ভাড়ার ধারনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবর্তনশীল। তাই সঠিক তথ্যানুযায়ী দরকষাকষি করে নেবেন।


টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সুবিধা হল-

  • উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
  • পরিবার/দম্পতি বা বন্ধুদের সাথে উপযুক্ত সময় কাটানোর সুবিধা।
  • সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশ।

পরামর্শ: প্রথমত, গাড়ি বা নৌকা ভ্রমণ, হোটেল বুকিং, খাবার কিংবা কোন কিছু কেনার পূর্বে দর কষাকষিতে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। এছাড়াও-

  • প্রয়োজনে ছাতা বা রেইনকোট নিবেন।
  • স্থানীয় গাইডের সাহায্যে পুরো অঞ্চল সুন্দরভাবে ঘুরতে পারবেন।
  • পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু এড়িয়ে চলবেন।

 

দৃষ্টি আকর্ষণযে কোন পর্যটন স্থান আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকবেন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করবেন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।

সতর্কতা: হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই উল্লিখিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল নাও থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন।

বি.দ্রঃ সকল প্রকার দালাল/প্রতারক থেকে সাবধান। পথে অনেক সাবধানে চলবেন যেন কোনো প্রকার বিপদে না পরেন। যেকোনো সমস্যায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা নিবেন অথবা বাংলাদেশের জাতীয় জরুরী সেবা – ৯৯৯ এ কল করবেন।


যেকোন তথ্য অথবা ভ্রমণ সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন অথবা কমেন্ট করুন-
ইমেইলadmin@biratbazar.com

 

নতুন নতুন আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ইউটিউব এবং সোশ্যাল চ্যানেলে-
ইউটিউব – https://www.youtube.com/@BiratBazar
ফেইসবুক – https://www.facebook.com/BiratBazarOfficial
→ টুইটার – https://twitter.com/BiratBazar
→ ইন্সটাগ্রাম – https://www.instagram.com/biratbazar/
থ্রেডস – https://www.threads.net/@biratbazar
লিংকড ইন – https://www.linkedin.com/company/biratbazar
Leave a Comment

Recent Posts

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স বান্দরবান জেলার প্রবেশ পথে (বান্দরবান-কেরাণীহাট) সড়কের পাশে পার্বত্য জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। এটি বান্দরবান শহর থেকে… Read More

1 week ago

Meghla Tourism Complex

Meghla Tourism Complex is located at the entrance of Bandarban district, along the Bandarban-Keranihat road, adjacent to the Hill District… Read More

1 week ago

বাকলাই জলপ্রপাত

বাকলাই জলপ্রপাত বাংলাদেশের বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলার নাইটিং মৌজার বাকলাই গ্রামে অবস্থিত। স্থানীয়দের নিকট “বাক্তলাই ঝর্ণা” নামেও পরিচিত। মুলত কেওক্রাডং… Read More

2 weeks ago

Baklai Falls

Baklai Waterfall is located in Baklai village of Nighting Moujar in Thanchi Upazila of Bandarban District, Bangladesh. Also known as… Read More

2 weeks ago

দুমলং পাহাড়

দুমলং পাহাড় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয়দের নিকট এটি “ম্শা পাঞ্জি হাফং” কিংবা “রেংত্লাং” হিসেবে পরিচিত। এর… Read More

2 weeks ago

Dumlong Pahar

Dumlong Pahar is located in Belaichhari Upazila of Rangamati District in southeastern Bangladesh. It is known as "Msha Panji Haphong"… Read More

2 weeks ago